সাংবাদিকতায় সনদ বিতর্ক ও কিছু কথা

মতামত

আশরাফুল ইসলাম

(১ মাস আগে) ৬ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৮ অপরাহ্ন

talktrain

বেশ কিছুদিন ধরেই সাংবাদিকতায় সনদ বিতর্ক লক্ষ্য করছি। মাঝে মাঝেই এই বিতর্কটা সামনে আসে এবং এর পক্ষে বিপক্ষে বেশকিছু লোক সরবও হয়ে ওঠেন। কিন্তু তারপর আবার যে লাউ সেই কদু।  তবুও এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর পক্ষে এবং বিপক্ষে কারা; আর কেনইবা এত বিতর্ক ?
ধরে নিলাম সকল সনদধারীরই যে জ্ঞান গরিমা পন্ডিত্য ও জানাশোনা একই রকম হবে এমন কোন কথা নেই। বহু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেও দেখেছি দুই লাইন শুদ্ধ বাক্য লিখতে পারেন না। লিখতে গেলে হয়ত দশটা বানান ভুল। কিন্তু তাই বলে  তো শিক্ষাকে অবজ্ঞা করা যাবে না। আর তাছাড়া স্বশিক্ষা বা প্রকৃতিপাঠের কথা বলে এসময়ে কাউকে রবীন্দ্র-নজরুলও বানানোর সুযোগ নেই। কেননা তখনকার দিনে পড়ালেখার ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধতা ছিল এখন কিন্তু তা নেই। তখনকার দিনের প্রথম প্রতিকূলতা ছিল পর্যাপ্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের অভাব। দশ-বিশ গ্রামের মধ্যে একটি স্কুল কলেজ না থাকা। দ্বিতীয়ত রাস্তা-ঘাট সংকট, দূর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা । তৃতীয় অতিমাত্রায় দরিদ্রতা। এখন এর কোনটিই নেই। তাই এসময়ে এসে পড়ালেখা না হলে হয় সে নিরেট গর্দভ আর না হয় বখাটে (বাবা-মায়ের বখে যাওয়া সন্তান) । তাই এখনকার দিনে পড়ালেখার বাইরে থাকার সুযোগ নেই। কেননা বর্তমান সময়ে প্রতিটি বাবা-মাও চায় তাঁর ছেলে মেয়েরা সুশিক্ষিত হোক। তাহলে এমন অবস্থায় এরকম একটি অশিক্ষিত মূর্খ প্রজন্মকে সাংবাদিকতায় আসার মত সুযোগ সৃষ্টিতে প্রলোভন দেখাচ্ছে কারা?
আমরা জানি সাংবাদিকতা এখন পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। মফস্বল বাদ দিলে অনেকেরই রুটি-রুজি জীবন জীবিকা এখন সাংবাদিকতার ওপর নির্ভরশীল। আর যেকোন পেশার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব সেই পেশার লোকদেরই। এজন্য একটি মানদন্ড বা সনদের অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আজকাল একটা পিয়নের চাকরির জন্যও মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা আবেদন করেন। তাহলে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাঁধা কোথায়? তবে অনেকেরই হয়ত ব্যতিক্রমী মেধা-প্রতিভা থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে সনদহীন কাউকে এসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা অন্যকোন পেশার কর্মকর্তা বানানো হচ্ছে এমন নজির নেই। তাহলে এই সনদের কথা শুনলে কারো কারো গাত্রদাহ শুরু হবে কেন, তারও কারণ বুঝতে পারিনা? এর একটি কারণ হতে পারে হয়ত নিজে সনদহীন নয়তো ষ্ট্যান্ডবাজি। তবে এক্ষেত্রে পেশায় যারা কমপক্ষে ৫ বছর কর্মরত তারা সনদহীন হলেও তো কোন সমস্যা নেই। কেননা এটিতো যারা নতুন করে আসতে চায় তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। তাহলে অহেতুক এই বিরোধিতা কেন?
জোর দিয়ে বলতে চাই সাংবাদিকতার মত মহান পেশার মান-মর্যাদা সম্মান রক্ষা ও উন্নয়নের দায়িত্ব আমাদের নেতৃত্ব ও অগ্রজদের নিতেই হবে।  কিন্তু সেক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হলো সংখ্যা । দেশে সাংবাদিকের সংখ্যা কত আমরা কেউ তা বলতে পারবো না, একথা আমি হলফ করে বলতে পারি। কেননা একশ্রেণির পত্রিকা টেলিভিশন অনলাইন এখন সাংবাদিক তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। একদা বিট পিয়ন, হকার, প্রেস মালিক, বিজ্ঞাপনের বিল কালেক্টর এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমের মালিক। টাকার বিনিময়ে কার্ড-বুম বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেতন তো দুরের কথা উল্টো মালিক-সম্পাদককে রিপোর্ট প্রকাশের জন্য নাকি টাকা দিতে হয়। একটি জেলা-উপজেলায় একাধিক সংবাদদাতা নিয়োগ দিয়ে সেখানেও ধান্ধাবাজি করা হচ্ছে। আর অশিক্ষিত মূর্খ, পান দোকানদার রাইডচালক মাদক পাচারকারীসহ অনেকেই এই সুযোগটা নিচ্ছেন। তাহলে সাংবাদিকতার মত দক্ষ ও মেধাসম্পন্ন এই পেশায় এই ধরণের আবর্জনা প্রবেশের সুযোগ আমরা কেন দিবো ? 
আমরা জানি একজন রিপোর্টারকে শিক্ষা স্বাস্থ্য, পররাষ্ট্র অর্থনীতিসহ নানারকম বিটে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একইভাবে নিউজ ডেস্ককেও এসব রিপোর্ট দেখতে গেলে যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে হয়। এমননি লাষ্ট চেকপোষ্ট হিসেবে সকল বিষয়েই তাকে দক্ষ হতে হয়। তাহলে একজন অশিক্ষিত মূর্খ মানুষের সংবাদমাধ্যমে কাজ করার সুযোগ কোথায়? পরিশেষে বলতে চাই সরকারের কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করবে সেটি ভিন্ন বিতর্ক কিন্তু সাংবাদিকতায় ন্যুনতম ডিগ্রি পাশ হতেই হবে এব্যাপারে কোন বিতর্ক থাকা উচিত নয়। বরং এই যোগ্যতা আরো বেশিই বিবেচনা করা উচিত বলে আমার অভিমত । তবে মফস্বলের ক্ষেত্রে সেটি কিছুটা শিথিলযোগ্য হতে পারে।

কারওয়ান বাজার, ঢাকা: ৫ জুন-২০২৪

(লেখাটি লেখকের ফেসবুক পোস্ট হতে নেওয়া)