যেভাবে টকশোগুলো ভুয়া ও মিথ্যা সংবাদের অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে উঠে

মতামত

শফিকুল আলম

(৩ সপ্তাহ আগে) ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:৫১ অপরাহ্ন

talktrain

টেলিভিশন ও ইউটিউবের টক শোগুলো ভুয়া ও মিথ্যা সংবাদের অন্যতম প্রধান উৎস। অনেক অংশগ্রহণকারী এসব টক শোতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই যোগ দেন এবং সেখানে তারা জনপ্রিয় মন্তব্য করার চাপের মধ্যে থাকেন। এই তীক্ষ্ণ মন্তব্যের প্রতিযোগিতা বা এক লাইনের চটকদার বক্তব্য দেওয়ার প্রবণতাই মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্র তৈরি করে। আমি কারও নাম নিতে চাই না, তবে ইউটিউবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাটালেই বোঝা যায় কারা এইসব মিথ্যা ও ভ্রান্ত ধারণা ছড়াচ্ছে।  

ভুয়া তথ্য ও সংবাদ মানুষের প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে। ২০১৭ সালে ফেসবুকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো ভুয়া সংবাদ ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা মিয়ানমারে তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। এখন বাংলাদেশকে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মানবিক দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ভুয়া সংবাদের কারণে ধর্মীয় দাঙ্গা ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন-পীড়নের ক্ষেত্র তৈরিতেও মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা বড় ভূমিকা রেখেছে।  

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ছড়ানো ভুয়া সংবাদের তথ্য যাচাই প্রায় সাত-আট বছর আগে শুরু হয়। তবে এই ডিজিটাল যাচাইকারী দল ও সংস্থাগুলো মূলত সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলোর ওপরই নজর দেয়। ইউটিউবার বা টক শোর আলোচকদের তথ্য যাচাই খুব একটা করা হয় না। অথচ আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব টক শোর উপস্থাপক, আলোচক এবং ইউটিউবারদের অনেকেই নিয়মিতভাবে মিথ্যা, গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর সঙ্গে যুক্ত।  

পশ্চিমা বিশ্বে পডকাস্ট পর্যন্ত নিয়মিতভাবে তথ্য যাচাইয়ের আওতায় আসে। উগ্র-ডানপন্থি ও তথাকথিত ‘উইক’ লিবারেল, উভয় পক্ষের বক্তব্যকেই শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ও বিশেষায়িত যাচাইকারী সংস্থাগুলো যাচাই করে। বাংলাদেশেও যেহেতু ইউটিউবার ও টক শোর আলোচকরা নতুন প্রভাবশালী মতপ্রকাশকারী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন, তাই তাদের বিষয়বস্তু নিয়মিত যাচাই করা দরকার। যারা ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ছড়ায়, তাদের চিহ্নিত করা উচিত। তবে তা যেন নিরপেক্ষ ও সঠিকভাবে করা হয়। এটি জরুরি, কারণ এইসব বিভ্রান্তিমূলক তথ্য অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, গণতান্ত্রিক চর্চা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। 

লেখক : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ও সাবেক ব্যুরো প্রধান, এএফপি

লেখকের ফেসবুক পোস্ট