
ডিজিটাল যুগে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য (Disinformation) এক বৃহৎ চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে, যা বিশ্বব্যাপী রাজনীতি, জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে। 'বিভ্রান্তিমূলক তথ্য' বলতে বোঝানো হয় এমন ইচ্ছাকৃত মিথ্যা তথ্য, যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা আদর্শিক স্বার্থে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। এটি ‘ভুল তথ্য’ (Misinformation) থেকে আলাদা, কারণ ভুল তথ্য সাধারণত অনিচ্ছাকৃত হয়ে থাকে, কিন্তু বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়। অন্যদিকে, 'গুজব' সাধারণত সত্যতা যাচাই না হওয়া তথ্য, যা অনিশ্চয়তা বা কৌতূহলবশত ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশসহ বহু দেশে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য রাজনৈতিক প্রচারণা, ধর্মীয় সংঘাত এবং শাসন ব্যবস্থায় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই এই প্রবন্ধে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য কীভাবে কাজ করে, তা ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
আজকের বিশ্বে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টুইটার (এক্স), হোয়াটসঅ্যাপ এবং টিকটকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তথ্য প্রবাহ অবাধ। এতে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ যেমন বেড়েছে, তেমনি এই স্বাধীনতা থেকে এক বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জন্ম নিয়েছে — গুজব, ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের লাগামহীন বিস্তার।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা ত্যাগের পর বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এই রাজনৈতিক রূপান্তরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিশেষ করে ভারতের কিছু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত গণমাধ্যম, অন্তর্বর্তী সরকার ও তার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হেয় করার উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তিকর খবর ছড়াচ্ছে।
এই প্রচারণায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং প্রশাসনিক অস্থিরতা নিয়ে অতিরঞ্জিত দাবি করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশকে বিশৃঙ্খল একটি দেশে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেছে, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয়তার মতো ভিত্তিহীন কথা বলা হয়েছে।
২০২৫ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইসলামি সন্ত্রাসবাদের উত্থান দেশটিকে একটি ‘খিলাফত রাষ্ট্রে’ পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাৎক্ষণিকভাবে তার বক্তব্যকে মিথ্যাচার ও দেশের সুনামের পরিপন্থী বলে নাকচ করে দেয় এবং বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
এই প্রসঙ্গে হিরণ্ময় কারলেকারের Bangladesh: The Next Afghanistan? বইয়ের কথাও স্মরণ করা যায়। ২০০৫ সালে প্রকাশিত এই বইয়ে বাংলাদেশকে তালেবান-ধারার ইসলামপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। যদিও বইটি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং চরমপন্থার বিষয় তুলে ধরে, তবে তার বিশ্লেষণ অতিমাত্রায় সাধারণীকৃত ছিল বলে সমালোচকেরা মনে করেন। বাস্তবে, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যসম্পন্ন সমাজ হিসেবে স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
সবচেয়ে বিতর্কিত ছিল ইন্ডিয়া টুডের একটি প্রতিবেদন, যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আইএসপিআর বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে এই খবরকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে এবং এটিকে একটি রুটিন বৈঠকের ভুল ব্যাখ্যা বলে জানায়।
আইএসপিআর গণমাধ্যমের প্রতি দায়িত্বশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলে, সেনাবাহিনী নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী শুধু একটি প্রতিরক্ষাবাহিনী নয়, এটি জাতীয় ঐক্য ও নিরাপত্তার মেরুদণ্ড।
স্বাধীনতা দিবস ও ঈদ-উল-ফিতরের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের উত্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী কিছু গোষ্ঠী কৌশলগতভাবে মিথ্যা তথ্য, বিকৃত ছবি ও বিদেশি ঘটনার ভুল উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এই প্রচারণার পেছনে প্রশিক্ষিত সামরিক কৌশলবিদ ও অগাধ অর্থ সহায়তা রয়েছে। “এই গুজবের পেছনে বহু অভিজ্ঞ সামরিক বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন; তাদের পেছনে অগণিত টাকা ঢালা হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য জুলাই আন্দোলনকে ব্যর্থ করা,” — বলেন ড. ইউনূস। তিনি জনগণকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, ভারতের রাজনৈতিক মহলে শেখ হাসিনার বিদায়কে কেন্দ্র করে উদ্বেগ থেকে এই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ধরনের মিথ্যা প্রচারণা কূটনৈতিক সম্পর্কে অবিশ্বাস, আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিঘ্ন, বিনিয়োগে বাধা এবং সামগ্রিকভাবে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে। ভুয়া খবরের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে টার্গেট করা হলে তা গণতন্ত্র, সামাজিক ঐক্য ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি বহু দেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে, সহিংসতা উসকে দিয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনআস্থা ক্ষয় করেছে। প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান যুগে এটির মাত্রা বাড়লেও ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে যে, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও প্রপাগান্ডা যুদ্ধ, বিদ্বেষ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য বহুবার ব্যবহার হয়েছে।
ইতিহাসে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো বারবার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ব্যবহার করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে। এর অন্যতম আলোচিত উদাহরণ হচ্ছে, "এমস টেলিগ্রাম" (Ems Telegram) — একটি বিকৃত কূটনৈতিক বার্তা, যা ১৮৭০ সালে ফ্রান্স-প্রুশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ঘটনার শুরু স্পেনের রাজসিংহাসনে প্রুশিয়ার প্রিন্স লিওপল্ড অব হোহেনজোলার্ন-সিগমারিনজেনের মনোনয়ন ঘিরে। ফ্রান্স মনে করেছিল, এতে তারা প্রুশিয়ার দ্বারা ঘিরে পড়বে। ব্যাড এমস নামক স্পা শহরে, ফরাসি রাষ্ট্রদূত কাউন্ট বেনেডেটি প্রুশিয়ার রাজা উইলহেলমের কাছে নিশ্চয়তা চান যে কোনও হোহেনজোলার্ন রাজপুত্র ভবিষ্যতে স্পেনের সিংহাসনের দাবিদার হবেন না। রাজা বিনীতভাবে সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন এবং সেই আলাপের বিবরণ নিজের চ্যান্সেলর অটো ফন বিসমার্ককে পাঠান।
বিসমার্ক, যুদ্ধ উসকে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি টেলিগ্রামের ভাষা বিকৃত করে সেটি এমনভাবে প্রকাশ করেন যেন রাজা বেনেডেটিকে অপমান করেছেন। এই টেলিগ্রামটি ১৮৭০ সালের ১৩ জুলাই প্রকাশিত হলে দুই দেশের জনমত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মাত্র ছয় দিন পর, ১৯ জুলাই ১৮৭০ সালে ফ্রান্স যুদ্ধ ঘোষণা করে।
এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল বিস্ময়কর: ফ্রান্সের দ্বিতীয় সাম্রাজ্যের পতন, নেপোলিয়ন তৃতীয়ের পতন এবং ১৮৭১ সালে জার্মান একীকরণ। এমস টেলিগ্রাম কেবল যুদ্ধের সূচনা ঘটায়নি, বরং দীর্ঘমেয়াদী ফ্রাঙ্কো-জার্মান বৈরিতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যা পরবর্তীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
এই ঘটনাটি ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ "Disinformation"-এর উদাহরণ — এটি গুজব বা ভুল তথ্য ছিল না, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত ও কৌশলগতভাবে ব্যবহৃত তথ্য, যার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ উসকে দেওয়া।
ঠান্ডা যুদ্ধকালীন সময়েও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছিল একটি প্রধান অস্ত্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়েই ব্যাপক প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে — কখনো প্রতিপক্ষকে দুর্বল প্রমাণে, কখনো নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায়।
ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ হলেও Disinformation থেমে যায়নি। বরং, ডিজিটাল যুগে এর রূপ হয়েছে আরও ঘাতক। ২০১৬ সালে রাশিয়ার হস্তক্ষেপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে Disinformation-এর ভয়াবহতা সামনে আসে। ভুয়া খবর ছড়ানো, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বট ব্যবহার, বিভ্রান্তিকর গল্প চালানো — সব মিলিয়ে এটি এক সুসংগঠিত প্রচারাভিযান ছিল। সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ ছিল Pizzagate ষড়যন্ত্র, যেখানে হিলারি ক্লিনটনকে একটি শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করা হয় — যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ছিল।
২০২২ সালে রাশিয়া দাবি করে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে গোপনে জৈব অস্ত্র গবেষণাগার পরিচালনা করছে। এই মিথ্যা তথ্য রুশ গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে ইউক্রেন আক্রমণের পক্ষে জনমত তৈরি করতে চায়। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই দাবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে খণ্ডন করেছে।
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সামরিক অভিযান এবং ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটোর হস্তক্ষেপ — এই দুটো ঘটনাই বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়।
ইরাকে ‘মাস ডিসট্রাকশন অস্ত্র’ থাকার ভুয়া অভিযোগ ও সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পর্কের মনগড়া গল্প বিশ্বজুড়ে সমর্থন আদায়ে ব্যবহৃত হয়। বাস্তবে, এসব অস্ত্র বা সংযোগের অস্তিত্ব ছিল না।
লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে গণহত্যা ও ‘ভায়াগ্রা বিতরণ করে ধর্ষণ উসকে দেওয়ার’ অভিযোগ প্রমাণিত হয় সম্পূর্ণ মিথ্যা। এইসব Disinformation-এর ফলাফল ছিল চরম বিশৃঙ্খলা ও দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা — ইরাকে আইএসআইএসের উত্থান, লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ ও আইনশৃঙ্খলার ধ্বস।
আধুনিক বিভ্রান্তিমূলক তথ্য আগের মতো শুধুই গুপ্তচর বা নকল দলিল নয় — এটি এখন সোশ্যাল মিডিয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-নির্ভর, দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বাসযোগ্যতার মত রুপ ধরে। ফলে এটি মোকাবেলা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Disinformation শুধু রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, জনস্বাস্থ্য, সামাজিক শান্তি ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকেও হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব স্পষ্ট — রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তি তৈরি, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি ইত্যাদি উদাহরণ ক্রমবর্ধমান।
Disinformation মোকাবেলায় প্রয়োজন আইনি, প্রযুক্তিগত ও শিক্ষামূলক সমন্বয়। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানিতে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়ালে শাস্তির বিধান রয়েছে। ফেসবুক, টুইটার (এক্স), ইউটিউবের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্ট শনাক্তে AI-ভিত্তিক অ্যালগরিদম ও ফ্যাক্ট-চেকিং পদ্ধতি চালু করেছে, যদিও এর কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক আছে।
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যমে তথ্য-যাচাই (fact-checking) ও মিডিয়া শিক্ষার প্রসার। নাগরিকরা যাতে বিভ্রান্তিকর গল্প শনাক্ত করতে পারে, সে সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা, সিভিল সোসাইটি ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগেই সম্ভব একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করা।
Disinformation এক নতুন অস্ত্র — যা যুদ্ধ না করেও রাষ্ট্র বিপর্যস্ত করতে পারে। ইতিহাসের এমস টেলিগ্রাম থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচন বা ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনা প্রমাণ করে, কৌশলগত মিথ্যা কতটা বিধ্বংসী হতে পারে।
বাংলাদেশেও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক অশান্তি ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জরুরি সাংবাদিকতা, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও আইনের একত্রে কাজ করা।
Disinformation শুধুই একটি মিথ্যা নয় — এটি সত্য ও সমাজের ভিত্তিকে ধ্বংস করে। এটি প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
ড. মো. মতিয়ার রহমান : সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), বাংলাদেশ পুলিশ
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজে প্রকাশিত লেখাটির ভাষান্তর। - মুক্তবাক