www.muktobak.com

“বাংলাদেশের গণমাধ্যম জনআস্থার দোলাচল’’; পাঠ প্রতিক্রিয়া


 গোলজার আহমেদ    ৪ মার্চ ২০১৯, সোমবার, ৪:৪২    বইপত্র


বাংলাদেশের গণমাধ্যমের পোস্টমর্টেম ২০১৯ সালে প্রকাশিত আমীন আল রশিদের বই “বাংলাদেশের গণমাধ্যম জনআস্থার দোলাচল ’’। কেন বললাম গণমাধ্যমের পোস্টমর্টেম? বইটা পড়লে কারণ বোঝা অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। এ পেশার অন্তরালে কত প্রকট সমস্যা অন্তর্নিহিত আছে সেটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে উদাহরণসহ তুলে ধরেছেন বইটির লেখক । সম্ভবত লেখক তাঁর সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে চয়নিত করেছেন বইয়ের প্রত্যেকটি বাক্যই । আপনি সাংবাদিক হোন বা না হোন একজন নাগরিক হিসেবেও যদি বইটি পড়েন তাহলে গণমাধ্যমের আদ্যান্তের সম্যক ধারণাটুকু পাবেন সেই নিশ্চয়তা দিতে পারি একজন পাঠক হিসেবে ।

বইটিতে ১৮টি শিরোণামে যে সকল বিষয় উত্থাপিত হয়েছে তার প্রত্যেকটিই একেকটি গণমাধ্যমের জন্য একেকটি সতর্কবার্তা । আগস্ট ট্র্যাজেডি এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম শিরোণামে লেখক সাহসিকতার সাথে রাষ্ট্রের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করেছেন। যা সচরাচর এই সময়ে আমরা দেখতে পাই না। অস্ত্রের মুখে রাষ্ট্রক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমের ভাষাও কেমন পাল্টে যায়,কেন পাল্টে যায়,কিভাবে পাল্টে যায় তাঁর বিস্তারিত তিনি তুলে ধরেছেন অনেক সহজ সরল ও সাবলিলভাবে । তার পরিণতিতে সাংবাদিকতা ও দেশ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটিও বলেছেন।

পরবর্তী শিরোণামে সংবাদ কখন হাস্যরসের বস্তুতে পরিণত হয় সেটাও তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহির সংবাদ সম্মেলনকে উপজীব্য করে । যা সচরাচর এখন কেউ আর এগুলো বলার সাহস পায় না । সবচেয়ে ভাল লেগেছে গোপন বৈঠক/সংবাদের ভিত্তি নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা দেখে । যারা সাংবাদিক বা কোন না কোনভাবে গণমাধ্যমের সাথে জড়িত তারা পড়লে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন যে এটি একজন সংবাদকর্মীর জন্য কতটুকু গুরুত্বপুর্ন। লেখক গণমাধ্যমের ভাষা ও আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর ভাষাকে ভিন্ন বলে প্রমান করেছেন, কিন্তু আমরা যারা সাংবাদিকতায় আছি সেটা অনেকে বুঝেও না বোঝার ভান করি । আমার মনে হয় এই না বোঝার ভানের বৃত্ত থেকে বের হতে না পারলে সাংবাদিকতাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ একমূখি (শুধুই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর) গৎবাঁধা বক্তব্যে সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় নিঃসন্দেহে। 

এর বাইরেও লেখক টেলিভিশনের ভাষা, টকশো রাজনীতি, ব্রেকিংযুদ্ধের প্রতিযোগীতা, সংবাদে মানুষের বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে যে জলজ্যান্ত ব্যাখা দিয়েছেন তা সবার জানা উচিত। দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যম কতটুকু তাদের দায়িত্ব পালন করছে বা রাষ্ট্র গঠনের সহায়ক যন্ত্র হিসেবে পরিচিত এই গণমাধ্যম আসলেই কেমন হওয়া উচিত সেটিও বাতলে দিয়েছে আমীন আল রশিদ ।

বইটিতে ফেইসবুকিং সাংবাদিকতা,উন্নয়ন সাংবাদিকতা কিংবা সাংবাদিকদের পেশার অনিশ্চয়তার বিষয়গুলো পুঙ্খানোপুঙ্খ ভাবে সবিস্তারে তুলে ধরেছেন লেখক । পাঠক হিসেবে যদি মুল্যায়ন করতে চাই এক কথায় বলবো সাংবাদিকতা পেশা উৎকর্ষের শ্রেষ্ট উপাদান হিসেবে কাজে দেবে বইটি । যাদের সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেয়ার আগ্রহ রয়েছে বা যারা সাংবাদিকতায় রয়েছেন তারা যদি বইটি পড়েন তাহলে অনেক না জানা বিষয়গুলোও জানতে পারবেন । অন্তত আর কিছু না হোক সংবাদ, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠান সমুহের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আর কোন সংশয় থাকবে না কারো।

গোলজার আহমেদ : ব্যুরো প্রধান,  চ্যানেল টোয়েন্টিফোর,  সিলেট




 আরও খবর