বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জ্বরের কারণে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মাহফুজউল্লাহ এর একটি পরীক্ষা আমি সময় মতো দিতে পারেনি। তিনিও জানতেন আমার জ্বর। কয়েকদিন পর তাঁর কাছে গিয়ে আবদার করে বললাম, আমি পরীক্ষাটা দিতে চাই। তিনিও পরীক্ষা নিতে রাজি হলেন।
তবে পরীক্ষার হলে নয়, একটি বিশেষ নিবন্ধ বা ফিচার লিখে আনতে বললেন বাসা থেকে। শিরোনাম, ‘পথশিশুদের রাত্রিযাপন’। লিখতে হবে ইংরেজিতে। সেখানেই বাধলো বিপত্তি। ভাষার মাস সবে শুরু হয়েছে। পথশিশুদের নিয়ে এত সুন্দর একটি লেখা লিখবো অথচ লিখতে হবে ইংরেজিতে! বাংলাতে ছাড়া লিখতে পারবো না বলে গো ধরে বসলাম। ইংরেজিতেই লিখতে হবে বলে তিনিও সাফ জানিয়ে দিলেন।
কিছু সময় পর আবারও আমার শ্রদ্ধার মানুষটির কাছে গেলাম। কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে ভাষার মাসের কথা স্মরণ করালাম। বললাম, খুব মন দিয়ে লেখাটি লিখতে চাই। তবে লেখাটি বাংলাতেই লিখতে চাই। যে ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি সেই ভাষাতে লেখার সুযোগ চেয়েছি, অন্যায় আবদার তো করিনি।
তিনি খুব মিষ্টি করে হাসতেন সব সময়। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসিতে প্রিয় মাহফুজউল্লাহ বলে উঠলেন, ‘ঠিক আছে ,তুমি যখন বাংলাতেই লিখবে, লেখ। তবে তোমার বন্ধুরা সবাই ইংরেজিতে লিখেছে এটা তো জানো। যেহেতু তুমি ইংরেজিতে না লিখে বাংলাতে লিখতে চাও সেহেতু খুবই গোছালো আর ভুলহীন লেখা লিখতে হবে। কোনোভাবে যদি একটি বানানও ভুল লিখো তাহলে দ্বিগুণ নম্বর কাটা! আর ভুল না হলে পুরো নম্বর পাবে তুমি।’
একটুও চিন্তা না করে রাজি হয়ে গেলাম। যদিও আমি বেশ বানান ভুল করি। তবুও বাংলাতে লিখলে শান্তি শান্তি লাগে। কয়েক দফায় বানান শুদ্ধ করে চারদিন পর লেখা জমা দিয়েছিলাম। পরের দিন দেখা হলে শিক্ষক এবং সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ জানালেন, ‘লেখা দেখে খুশি হয়েছি, তোমাকে পুরো নম্বরই দিয়েছি।’
আজ (২৭ এপ্রিল ২০১৯) বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিক এবং আমার প্রিয় শিক্ষক মাহফুজউল্লাহ চিরতরে চলে গেলেন আমাদেরকে ছেড়ে। ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। পরপারে ভালো থাকবেন জোর কণ্ঠে কথা বলা মানুষটি। ভালো থাকবেন প্রিয়। ভালোবাসা নিবেন।