রাজধানীতে বিভিন্ন অজুহাতে একের পরে এক সংবাদপত্রের স্থায়ী স্টল উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ ওইসব এলাকায় এখন আর হাত বাড়ালেই পাচ্ছেন না বিভিন্ন সংবাদপত্র। সংবাদপত্র বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব স্টল মালিকরা বলছেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কথা বলে স্টল উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আর স্থান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে আগের চেয়ে বেচাবিক্রিও কমে গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন তারা।
বিক্রেতাদের অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এসব দোকান। নষ্ট করা হয়েছে সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। তাদের অভিযোগ, এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৭ হাজার লোকের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উচ্ছেদের পর পুনরায় স্থান না দেওয়াতে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুধু সংবাদপত্র স্টল নয় আমরা চেষ্টা করব উচ্ছেদ হওয়া সবাইকেই পর্যায়ক্রমে বসানোর। তবে জায়গা পাওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ। মেট্রোরেলের জন্য যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলে তাদের পূর্বের স্থানে বসানো হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
একসময় রাজধানীর মোড়ে মোড়ে সংবাদপত্র বিক্রির স্থায়ী স্টল ছিল। এসব স্টল থেকেই বেশি পত্রিকা বিক্রি হতো। ভাসমান হকাররাও এসব স্টল থেকে পত্রিকা নিয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন স্থায়ী স্টল তেমন চোখে পড়ে না। কোনো ধরনের বিকল্প না রেখেই একের পর এক এসব স্টল উচ্ছেদ করে চলেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এতে পত্রিকার ক্রেতা-বিক্রেতারা পড়েছেন সমস্যায়। স্থায়ী স্টল না থাকায় অনেককে একটি সংবাদপত্র কিনতে ঘুরতে হচ্ছে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়।
মালিবাগ এলাকার হকার ফরিদ বলেন, এই এলাকায় একাধিক স্টল ছিল। এসব স্টলে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন বিক্রি হতো। আশপাশের কেউ প্রয়োজন হলে এসব স্টল থেকে পত্রিকা কিনে নিত। এখন চাইলেই কেউ পত্রিকা পায় না। আগে থেকে হকারকে বলে রাখতে হয়।
মিরপুরের বাসিন্দা জায়েদ হাসান বলেন, একসময় মিরপুর বাসস্ট্যান্ডে পত্রিকার স্থায়ী স্টল ছিল। প্রয়োজনীয় যেকোনো পত্রিকা পাওয়া যেত সেখান থেকে। কিন্তু এখন একটি প্রয়োজনীয় পত্রিকা কিনতে অনেক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
সংবাদপত্র বিক্রেতাদের সংগঠন ‘ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ সূত্রে জানা গেছে, সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১০০টি স্থান বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি স্টলই উচ্ছেদ করা হয়েছে।
ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বরাদ্দ দেওয়া ১০০টি স্টলের ৭০টির বেশিই বিভিন্ন কারণে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বেশিরভাগ স্টলই রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি দোকানের সালামিস্বরূপ সিটি করপোরেশনের কাছে ২০ হাজার টাকা জমা রয়েছে আমাদের। নতুন করে এই স্টলগুলো আবার চালু করার জন্য সিটি করপোরেশন বরাবর আবেদন করে আসছি। কিন্তু এর কোনো ফল পাচ্ছি না। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে উচ্ছেদ হওয়া স্টলগুলো পুনর্নির্মাণের দাবিতে আমরা আবারও দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন জানাব।’
ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, রাজধানীতে সংবাদপত্র বিক্রির স্টলগুলো উচ্ছেদ করায় সংবাদপত্র বিক্রি ১০ ভাগের বেশি কমে গেছে।
তিনি বলেন, উচ্ছেদ হওয়া স্থানের আশপাশে চার ফুট জায়গা দিলে নতুন করে স্টল বসানো যেত। বিষয়টি নিয়ে তিনি সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন।
ঢাকার ৭০% সংবাদপত্র স্টল উচ্ছেদ দেশ রুপান্তরে ১২মে প্রকাশিত সংবাদ। - মুক্তবাক