গণমাধ্যম যদি গণমানুষের মাধ্যম হয় তাহলে সেই মাধ্যমের ভাষা কী হবে? আমরা যদি এই প্রশ্ন তুলি তাহলে পাল্টা প্রশ্ন তুলতে হবে, গণমানুষের অভিন্ন ভাষা বলে আসলে কিছু আছে কি না? কেননা, গণমানুষের কাতারে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আছেন, তেমনি আছেন রিকশাচালক, বাসের কন্ডাকটর, সাংবাদিক, ব্যাংকার, পড়ালেখা না জানা গৃহকর্মী। তারা সকলেই গণমানুষ এবং তারা সবাই গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতা। তাহলে গণমাধ্যম কার ভাষায় কথা বলবে।
সে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপকের ভাষায় কথা বলবে নাকি তার বাসার গৃহকর্মীর ভাষায়? গণমাধ্যম যদি এভাবে সব মানুষের ভাষায় কথা বলা শুরু করে, সেটি এক ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। আর এ কারণেই বলা হয়, গণমাধ্যম গণমানুষের কথা বলবে; কিন্তু তার একটি স্ট্যান্ডার্ড বা মান ভাষা থাকবে। তারপরও আমরা দেখি, সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন ও রেডিওর ভাষায় বেশ ফারাক।
একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি বিভিন্ন টেলিভিশনের টিকার বা স্ক্রলে এবং সংবাদে লেখা হয়,‘রামপালের বিরুদ্ধে হরতালে পুলিশের টিয়ারশেল, লাঠিপেটা, সাংবাদিকসহ আহত ১২।’ বাগেরহাটের একটি এলাকার নাম রামপাল। হরতাল সেই এলাকার বিরুদ্ধে নয়। বরং হরতাল সুন্দররবন রক্ষার দাবিতে। রামপালে যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে যাচ্ছে, সেই প্রকল্প বাতিলের দাবিতে। কিন্তু সংক্ষেপ ও সহজ করতে গিয়ে লেখা হয়েছে ‘রামপালের বিরুদ্ধে হরতাল।’
এরকম সংক্ষেপ বা সহজ করতে গিয়ে টেলিভিশনগুলো প্রতিনিয়ত এরকম আরও অনেক শব্দ ব্যবহার করে যা দর্শককে বিভ্রান্ত করে। তবে বিভ্রান্তিটা বেশি হয় বিদেশি শব্দের বানান ও উচ্চারণে। একই শব্দের বানান টেলিভিশনগুলো ভিন্ন ভিন্ন লেখে। এতে দর্শকদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয় যে, কোন বানানটি শুদ্ধ? বিশেষ করে টেলিভিশনের স্ক্রল বা টিকারে যখন একটি শব্দ বারবার ঘুরে ঘুরে প্রদর্শিত হয়, তখন বানানটি দর্শকের চোখ থেকে মগজে আটকে যায়। ফলে কোনো একটি ভুল বা বিভ্রান্তিকর বানান যখন এভাবে অনবরত চলতে থাকে, সেটি প্রথমত দর্শককে ধাঁধায় ফেলে, দ্বিতীয়ত টেলিভিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও মানুষের মনে দ্বিধা তৈরি হয়।
কোনো কোনো টেলিভিশন তাদের সংবাদ ও অনুষ্ঠানের কারণে দারুণ দর্শকপ্রিয় হবার পরও তাদের স্ক্রলে প্রতিনিয়তই ভুল বানান লক্ষ্য করা যায়। শুধু তাই নয়, অনুষ্ঠানের নামও অনেক সময় ভুল বানানো দেখা যায়। ভাষার মাস সামনে রেখে বিশেষ প্রতিবেদনেও বাংলা শব্দের ভুল বানান চোখে পড়ে। অথচ এই সমস্যা খুব সহজেই এড়ানো যায় যদি টিকার বা স্ক্রলটি প্রচারের আগে বানানটি বাংলা একাডেমির অভিধান দেখে নেয়া যায়। হাতের কাছে সবশেষ সংশোধিত একটা অভিধান রাখার বিকল্প নেই।
সব সময় ব্যবহৃত সহজ শব্দগুলোর বানান ভুল হবার কথা নয়। কিন্তু তাও হয়। এর কারণ অবহেলা, অসচেতনতা। যিনি লিখলেন তিনি হয়তো প্রমিত বা সঠিক বানানটি জানেন। কিন্তু তাড়াহুড়া করতে গিয়ে বা সচেতন না থাকার কারণে ভুল লিখেই অনএয়ার করে দিয়েছেন।
ইংরেজির প্রভাব
বিশ্বরাজনীতি, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা এবং তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নের ফলে সর্বক্ষেত্রেই এখন ইংরেজির প্রাধান্য। ফলে টেলিভিশন সাংবাদিকদেরও প্রতিনিয়ত অজস্র ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে হয়। সংবাদকক্ষ বা নিউজরুমে প্রতিদিনকার ব্যবহৃত শব্দের অধিকাশংই ইংরেজি। যেমন খবরের বদলে নিউজ, সংবাদ বা বার্তাকক্ষের বদলে নিউজরুম, উপস্থাপকের বদলে প্রেজেন্টার, আলোচনা অনুষ্ঠানের বদলে টকশো, সংবাদ সূচনার বদলে আইভি বা ইনভিশন, প্রযোজনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বদলে প্রোডাকশন কন্ট্রোল রুম বা পিসিআর ইত্যাদি। একইভাবে উভ (আউট অব ভিশন), প্যাকেজ, ভয়েসওভার, লাইভ, ডাভ, সাবটাইটেল, জিএফএক্স, ভিজÑএরকম অসংখ্য শব্দ ব্যবহার করতে হয় যেগুলোর যুৎসই কোনো বাংলা নেই বা বাংলা করার চেষ্টাও হয়নি। আবার অনেক সময় সংক্ষেপ ও সহজবোধ্য রাখতে এগুলোর বাংলা করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের খুব একটা আগ্রহও থাকে না।
বানান রীতি
কোনো কোনো টেলিভিশনের নিজস্ব বানান রীতি রয়েছে। কারো লিখিত বা কারো অলিখিত। যেমন কেউ লেখে গ্রেফতার, কেউ গ্রেপ্তার। কেউ লেখে শনাক্ত, কেউ সনাক্ত। এসব ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির অভিধান অনুসরণ করা ভালো। তবে সমস্যা দেখা দেয় বিদেশি শব্দের বানানের ক্ষেত্রে। এঙ্গেলা মারকেল নাকি এঙ্গেলা মেরকেল, মমতা বন্দোপাধ্যায় নাকি মমতা ব্যানার্জি, হুথি বিদ্রোহী নাকি হুতি বিদ্রোহী, পালমিরা নাকি পালমাইরা, ক্যারোলিনা নাকি ক্যারোলাইনা ইত্যাদি শব্দ একেক টেলিভিশনে একেকভাবে লেখে। এর কারণ ইংরেজি থেকে এসব শব্দ বাংলা করতে হয়। ঝামেলা পাকে টেনিস খেলোয়াড়দের নাম নিয়ে। বিশেষ করে রাশিয়ান বা ওই অঞ্চলের খেলোয়াড়দের নামের বানান খুবই অদ্ভুত এবং অনেক সময় উপস্থাপকের ঘাম বেরিয়ে যায় ওইসব নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে। এসব বানানের একটি অভিন্ন রীতি দাঁড় করানো কঠিন যতক্ষণ না টেলিভিশন বা গণমাধ্যমের জন্য একটি অভিন্ন স্টাইলশিট বা ভাষারীতি তৈরি করা যায়।
গ্রাফিক্স/পরিসংখ্যান
টেলিভিশনের সংবাদে প্রতিনিয়তই আমাদের গ্রাফিক্স ও পরিসংখ্যান দিতে হয়। দেখা যায়, গ্রাফিক্সে বিদেশি শব্দ থাকলে সেখানে বানান ভুল থাকে। পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রেও অনেক লম্বা এবং চোখে ধাঁধা লেগে যাওয়ার মতো সংখ্যা টেলিভিশনের স্ক্রিনে দেখা যায়। যেমন বাংলাদেশের আইটি খাতে ১,২০০০০৮০০ টাকা বিনিয়োগ করতে চায় চীন। অনেক সময় টাকার অংক লেখা হয় মিলিয়ন ডলারে। অনেক দর্শক নাও জানতে পারেন এক মিলিয়নে কত হয় এবং সেই ডলারকে টাকায় পরিবর্তন করলে কত হয় বা এই হিসাব করার সময় দর্শকের নাও থাকতে পারে। সুতরাং টাকার অংকের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সেটিকে বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করে একটা সমান সংখ্যা বললে ভালো। কত কোটি কত লাখ কত হাজার কত পয়সা বলার প্রয়োজন নেই। মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাদে অন্য সংখ্যার সমান বা রাউন্ড ফিগার করলে দর্শকের সুবিধা হয়।
শব্দের ব্যবহার
কিন্তু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য থাকা প্রয়োজন। যেমন আমরা ‘পতিতা ‘ শব্দটি ব্যবহার করব নাকি ‘যৌনকর্মী’? ‘ধর্ষিতা’ বলব নাকি ‘ধর্ষণের শিকার’? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া প্রেসবিজ্ঞপ্তি বা সংবাদ ব্রিফিং থেকে অনেক সময় সংবাদ তৈরি করা হয়। যে কারণে অনেক সময়ই এভাবে লেখা হয়, ‘পুলিশের গুলিতে ডাকাত সর্দার অমুক নিহত’ বা ‘র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর নিহত’ ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার। যদি পুলিশের তালিকায় আসলেই কেউ শীর্ষ সন্ত্রাসী বা ডাকাত সর্দার হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে এটি বলা যেতে পারে। কিন্তু তালিকাভুক্ত না হলে লেখা উচিত, অমুক নামে একজন নিহত হয়েছেন বা গ্রেপ্তার হয়েছেন; পুলিশের দাবি তিনি ডাকাত সর্দার/শীর্ষ সন্ত্রাসী। টেলিভিশনের টিকারেও এসব বাক্য লেখার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হয়, যাতে মনে না হয় যে, ডাকাত সর্দার বা শীর্ষ সন্ত্রাসী আমরা নিজেরাই বলছি।
জাজমেন্ট দেয়া
আমরা অনেক সময় জাজমেন্ট দিয়ে দিই। যেমন ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত/বিরূপ মন্তব্য করায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে’। এরকম বাক্য লিখলে দর্শকের মনে হবে, খালেদা জিয়া আসলেই বিতর্কিত/বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আদালত রায় না দেয়া পর্যন্ত এভাবে লেখার সুযোগ নেই। বরং লেখা উচিত:‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য করায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।’ এটি আরও পরিস্কার করে লেখা যায় এভাবে : ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে, এমন মন্তব্য করায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।’
সম্বোধন
টকশোতে অতিথিকে ভাই বা আপা বলে সম্বোধন করা এখন মোটামুটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। হতে পারে ওই অতিথিকে উপস্থাপক মহোদয় ভাই বা আপা বলেই সম্বোধন করেন। কিন্তু তারা যখন টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত, সেখানে এভাবে আপা বা ভাই করা কতটা সঙ্গতÑতা ভাবা দরকার। প্রত্যেকেরই একটা নাম আছে। পরিচয় আছে। সেই নাম-পরিচয় দিয়েই সম্বোধন করা যায়। যেমন জনাব ওবায়দুল কাদের, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? এখানে কোনো উপস্থাপক যদি বলেন, কাদের ভাই আপনি এ বিষয়ে কী বলবেন? এটা শুনতে ভালো লাগে না। স্ক্রিনের বাইরে কাদের ভাই বলা আর স্ক্রিনে বলা এক জিনিস নয়।
ধর্মীয় অনুষঙ্গ
সংবাদের সাথে কিছু ধর্মীয় শব্দ বা শব্দবন্ধ জড়িত থাকে। সেগুলো পুরোটা লেখা এবং বিশুদ্ধ উচ্চারণ জরুরি। যেমন : কারো মৃত্যু সংবাদে ‘ইন্না...রাজিউন’ লেখার প্রবণতা আছে। প্রথমত টেলিভিশনে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন না লেখাই উত্তম। কারণ টেলিভিশনের দর্শক সব ধর্মের মানুষ। যখন কোনো মৃত্যুসংবাদ স্ক্রলে দেয়া হবে, তখন যিনি প্রয়োজনবোধ করবেন, তিনি নিজেই ‘ইন্না লিল্লাহ’ পড়ে নিতে পারবেন। তবে লিখতে হলে সংক্ষেপে ‘ইন্না...রাজিউন’ না লিখে পুরোটা ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ লেখা উচিত। একইভাবে সংক্ষেপে হযরত মুহাম্মদ স. লিখলেও উপস্থাপকের উচ্চারণের সুবিধার্থে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম লেখা উচিত। একইভাবে (রা.) এর পূর্ণাঙ্গ রূপ রাদিয়াল্লাহু আনহু, (র.)-এর পূর্ণাঙ্গ রূপ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি। কারো নামের আগে-পরে আলহাজ বা হাজি লেখা উচিত নয়। তবে যার নামের সঙ্গে আলহাজ বা হাজী শব্দটি ব্র্যান্ড যেমন হাজী সেলিম, সেটি ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ইংরেজি শব্দ
বাংলা সংবাদে এবং যেই সংবাদ ও অনুষ্ঠানের মূল দর্শক বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষিত মানুষÑসেসব সংবাদ ও অনুষ্ঠানেও উপস্থাপককে প্রচুর ইংরেজি শব্দ প্রয়োগ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে শোবিজ বা বিনোদন বিষয়ক অনুষ্ঠানে। এসব অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হন সাধারণত কোনো তরুণ-তরুণী এবং এদের একটা বড় অংশই হয় ইংরেজি মাধ্যমের কিংবা রাজধানীর অভিজাত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসা। ফলে তারা বন্ধুদের সেেঙ্গ যেরকম বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে এক অদ্ভুত ভাষায় কথা বলেন, টেলিভিশন শোয়ের উপস্থাপনায়ও সেই একই ভাষা ও ভঙ্গি ব্যবহার করেনÑযা সব শ্রেণির দর্শকের ভালো নাও লাগতে পারে। ধরন ও
পিটিসি ও লাইভ
সংবাদের ভেতরে ক্যামেরার সামনে রিপোর্টার যে বক্তব্য দেন সেটিকে পিটিসি বা পিস টু ক্যামেরা বলা হয়Ñযা রিপোর্টকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ বা বড় ঘটনার ক্ষেত্রে রিপোর্টার ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি যুক্ত হন। ঘটনার বর্ণনা করেন। কিন্তু অনেক সময়ই এই লাইভ বা পিটিসিতে তিনি যা বলেন, সেখানে অনেক ভুলভাল চোখে পড়ে। এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করেন যা শুধু কানেই লাগে না বরং মাঝে মধ্যে বাক্যের অর্থও বদলে দেয়। অনেক সময় হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে। এর মূল কারণ রিপোর্টারের শব্দভা-ার ও বাক্য গঠনের দুর্বলতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং কোনোকিছু গুছিয়ে বলতে না পারা। নিয়মিত চর্চায় এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে সব সময় সৈয়দ শামসুল হকের একটি তত্ত্ব মনে রাখলে ভালো হয়, যেমন তিনি বলেছেনÑ‘আপনি কী লিখবেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কী লিখবেন না, সেটি আরও গুরুত্বপূর্ণ।’ সেভাবে লাইভ বা পিটিসিতে আপনি কী বলবেন সেটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কী বলবেন না সেটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার কোনো একটি কথায় বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে আপনার নিজের ক্যারিয়ার, জীবন এবং আপনার স্টেশন।
পিটিসি বা লাইভে অতিমাত্রায় এ্যাঁ উঁ করা এবং ‘ধরুন’, ‘আসলে’Ñএরকম শব্দ বলে থাকেন রিপোর্টাররা। কারো কারো ক্ষেত্রে এটি মুদ্রাদোষে পরিণত হয়। এগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি। শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বাড়তি কথা মানেই সেখানে ভুলের আশঙ্কা বেশি। সুতরাং খুব অল্প কথায় যদি বিষয়টির বর্ণনা দেয়া যায়, সেখানে অতিরিক্ত কথা না বলাই ভালো। সমস্যা দেখা দেয় বড় কোনো ঘটনা যদি ঘটতে থাকে, যেমন বড় আগুন যেটি নেভানোর চেষ্টা চলছে অথবা জঙ্গিবিরোধী বড় অভিযান যেটি চলছেÑতখন নিউজরুম থেকেই বলা হয় ‘কনটিনিউ করো’ মানে চালিয়ে যাও। রিপোর্টার যদি খুব দক্ষ না হন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি তার যথেষ্ট জানাশোনা না থাকে, তখন অনেক সময় লাইভে ঘটনার বর্ণনা দেয়া তার পক্ষে কঠিন। এ কারণে অনেক সময়ই দেখা যায় রিপোর্টার ‘কনটিনিউ করতে গিয়ে’ অনেক এলোমেলো কথা বলেন।