চলতি মাসের ২৫ তারিখে চিরবিদায় নিলেন স্যার হ্যারল্ড ইভান্স। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাকে বলা হয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দিকপাল। অনেকেই তাকে বলেন সময়ের শ্রেষ্ট সম্পাদক কিংবা কিংবদন্তি সম্পাদক।
সাত দশকের বেশি সময়ের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে স্যার হ্যারল্ড ইভানস ১৯৬৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ১৪ বছর ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমস-এর সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন বিভিন্ন সাময়িকী। ছিলেন প্রকাশকও।
সানডে টাইমস-এর সম্পাদক হিসেবেই তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান।
২০১১ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এডিটর অ্যাট লার্জ।
কিভাবে শুরু হয়েছিল কর্মজীবন
১৯২৮ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে স্যার হ্যারল্ড ইভানসের জন্ম। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তাঁর সাংবাদিকতায় পথচলা শুরু। উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের নর্দান ইকো পত্রিকার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে সম্পাদক হন মাত্র ৩২ বছর বয়সে। ১৯৬৭ সালে সানডে টাইমস পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এরপর তিনি ও তাঁর অনুসন্ধানী সাংবাদিক দল মিলে প্রকাশ করেন ভয়াবহ এক তথ্য। সে সময় থ্যালিডোমাইড বহুল বিক্রিত একটি ওষুধ। গর্ভাবস্থায় এই ওষুধ সেবনের পর অনেক শিশু মারাত্মক জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মেছিল। হ্যারল্ড ইভানস বিষয়টি সামনে নিয়ে এলে সৃৃষ্টি হয় তোল পাড়। পরে যুক্তরাজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়।
তাঁর আমলেই ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা কিম ফিলবির আসল পরিচয় ফাঁস করেছিল সানডে টাইমস। কিম সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়েও কাজ করতেন।
মার্কিন মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক টাইমস নিউজপেপারস লিমিটেড কিনে নেওয়ার পর ১৯৮১ সালে স্যার হ্যারল্ড ইভানস দ্য টাইমস পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু মারডকের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় এক বছরের মধ্যেই পদত্যাগ করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান, ডিউক ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ২০০৪ সালে তাঁকে নাইট উপাধি দেওয়া হয়। তিনি দ্য নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ, দ্য আটলান্টিকসহ আরও কয়েকটি সংবাদপত্রে কাজ করেছেন।
১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা র্যানডম হাউসের প্রেসিডেন্ট ও প্রকাশক হিসেবেও দারুণ সফল ছিলেন হ্যারল্ড ইভানস। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে দ্য আমেরিকান সেঞ্চুরি ও দে মেড আমেরিকা অন্যতম।