”নিউজ ফ্র্যামিং” রাজনীতি ও গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ধারনা। নিউজ ফ্র্যামিং করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে সম্ভবত প্রথম দিকে রাখা যায়। শুধু ফ্র্যামিং না…. বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতো রীতিমত রাজনীতি করে। বিশেষ গ্রুপ বা দলের সেবা করার জন্য রীতিমত প্রতিযোগীতা করে।
আগেই বলেছি রাজনীতিতে ফ্র্যামিং একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারনা। তবে ব্যাপারটা খুবই সাদামাটা অথচ এর প্রভাব রীতিমত ভয়ংকর হতে পারে। সহজ করে বললে, আপনি একটা গ্লাস দেখলেন যাতে অর্ধেক পানি আছে। এখন আপনি বলতে পারেন “অর্ধেক খালি” আবার বলতে পারেন ”অর্ধেক ভরা”। বাদমাধ্যমগুলো একটা ইস্যূকে বিশেষভাবে তুলে ধরে মানুষের মতামত ও চিন্তাকে কিভাবে প্রভাবিত করে সেটাই ফ্র্যামিংয়ের আলাপের বিষয়। একটা ঘটনার নানা দিক থাকে। সংবাদ মাধ্যমগুলো সেই নানা দিকের কোনো একটা বিশেষ দিকে ফোকাস করে যখন মানুষের মতামত প্রভাবিত করতে চায় সেটাই ফ্র্যামিং।
ধরেন কোন বিরোধী দল হরতাল ডাকলো। তারা দাবী করছে দেশে গণতন্ত্র তাই তারা হরতাল ডেকেছে। আবার হরতালের কারণে দেশের ক্ষতিও সেটাও একটা ব্যাপার। এখন পত্রিকা ঠিক কোনটাকে ফোকাস করে নিউজ করবে, এটা গুরুত্বপূর্ণ।
ধরেন একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলো যে ধর্ষন করেছে…….!! দেখেন ব্যাপারটা কেবল অভিযোগ…….. এখনো বিচার হয় নি, কিংবা প্রমাণিত হয় নি। সংবাদ মাধ্যম দেখা যায় ক্ষেত্র বিশেষে তাকে ধর্ষক বলে সংবাদ প্রকাশ করছে। আবার এই ঘটনা অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যম হয়তো ভিন্নভাবে নিউজ করে। তখন হয়তো নিউজ করছে ধর্ষণের ”কথিত অভিযোগ” এই শব্দ ব্যবহার করে। দুইটাই আসলে তার রাজনীতির অংশ। এখানে সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় সংবাদকে বিশেষ উদ্দেশ্যে মানুষের সামনে উপস্থাপন করছে।
সংবাদ মাধ্যমের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ধর্ষক বলার রাইট (যেহেতু ব্যাপারটা বিচারধীন) যেমন নাই, আবার সেই অভিযোগকে “কথিত” বলারও রাইট নাই। কিন্তু প্রতিনিয়ত সংবাদ মাধ্যম এই দুইটার যে কোনো একটা করছে। এখানে সাম্প্রতিক একটা ঘটনার প্রেক্ষাপটে দুটো পত্রিকার শিরোনাম তুলে ধরা হলো:
পত্রিকাঃ১
শিরোনামঃ ”বিজ্ঞান শেখাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের রোষে পড়া শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জামিন হয়নি”
ইন্ট্রোঃ ”মুন্সিগঞ্জ সদরে একটি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এক স্কুল শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।”
পত্রিকাঃ২
শিরোনামঃ ”ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, শিক্ষক কারাগারে”
ইন্ট্রোঃ
”মুন্সিগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক শিক্ষককে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।”
বলে রাখা ভালো, ব্যাক্তিগতভাবে আমি ঐ শিক্ষকের পক্ষে যেন ন্যায় বিচার হয় সেটাই চাই। আর আমার আলাপের বিষয় এটা না যে ঐ শিক্ষক অন্যায় করেছে নাকী ধর্ম অবমাননা করেছ, নাকী তার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে। এখানে আলাপের বিষয় সংবাদ মাধ্যমের ফ্র্যামিংয়ের ব্যাপারটা তুলে ধরা।
উপরে উল্লেখিত পত্রিকাঃ১ এর শিরোনাম ও ইন্ট্রো খেয়াল করেন। এই দুইটা শিরোনাম ও লাইনের মধ্যে ফ্র্যামিং আছে। এবং এটা স্পষ্ট যে, যে বা যারা নিউজটা করছে তাদের একটা উদ্দেশ্য আছে। এবং এর মাধ্যমে তারা মানুষের ভিউকে প্রভাবিত করতে চায়। খবর করার পাশাপাশি তারা আসলে এক ধরনের সিদ্ধান্ত হাজির করছে। সেই তুলনায় দ্বিতীয় পত্রিকার নিউজটি কেবল সংবাদ প্রকাশ করেছে। সেখানে ফ্র্যামিং তেমন একটা নেই।
এটা একটা উদাহরণ মাত্র। শুধু এই ইস্যূ না । এই রকম হাজার হাজার উদাহরণ পাওয়া যাবে। এবং এ করম অন্য অনেক ইস্যূতেই বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম এই কাজটি করে থাকে।
** মো. শহিদুল ইসলাম, লেখক ও গবেষক