www.muktobak.com

দাম বাড়ছে নয়াদিগন্তের, কিন্তু কেন?


  মুক্তবাক রিপোর্ট    ১৫ জুন ২০২২, বুধবার, ১১:৩৭    খবর


 ৫ টাকায় ১৬ পৃষ্ঠার দৈনিক হিসাবে যাত্রা শুরু করে দৈনিক নয়াদিগন্ত। বিশেষ উপলক্ষে পৃৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়লেও দাম থাকত অপরিবর্তিত। অবকাশ ও থেরাপি নামে দুটি ম্যাগাজিনেরও আয়োজন ছিল সপ্তাহের বিশেষ দিনে।  কমদামে বড় কলেবর হওয়ায় পাঠক মহলেও ভালো সাড়া ফেলতে সক্ষম হয় দৈনিকটি। সেই জৌলুষ বেশ কিছু দিন আগেই হারিয়েছে। তবে একটি বিশেষ শ্রেণীর পাঠকের কাছে এখনও গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে নয়াদিগন্ত।
আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা দৈনিকটির কলেবর কমেছে এবং দামও বেড়েছে। ৫ টাকার দৈনিকটির বর্তমান দাম ১০ টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২তে। চরম আর্থিক সংকট মোকাবেলা করা দৈনিকটি টিকে থাকতে আবারো দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। প্রায় বিজ্ঞাপন বিহীন অবস্থায় কাগজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন।
১৪ জুন নয়াদিগন্তের প্রথম পাতায় ‌পাঠকের প্রতি একান্ত নিবেদন নামে লেখা নিবন্ধে সম্পাদক দৈনিকটির দাাম বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, সংবাদপত্রের মূল কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে শতভাগের বেশি। একই সাথে বিপুলভাবে বেড়েছে প্রিন্টিংয়ের ব্যয়ও। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আবার একই কারণে জনগণ যে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে সে জন্যে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি একটি দৈনিক পত্রিকা কেনাও অনেকের কাছে বিলাসিতার বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে পত্রিকার দৈনিক বিক্রিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। সার্বিকভাবে সংবাদপত্র শিল্প এখন সর্বকালের কঠিনতম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। পত্রিকার কর্তৃপক্ষ, সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আমাদের শুভান্যুধ্যায়ীদের সাথে আলোচনা করে আমরা যৌক্তিকভাবে সবচেয়ে কম পরিমাণে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকে পত্রিকার দাম হবে প্রতি কপি ১০ টাকার পরিবর্তে ১২ টাকা। এই সিদ্ধান্ত ১৬ জুন ২০২২ থেকে কার্যকর হবে।

মুক্তবাকের পাঠকদের সুবিধার্থে পুরো লেখাটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো।

পাঠকের প্রতি একান্ত নিবেদন
॥ আলমগীর মহিউদ্দিন ॥
নয়া দিগন্তের সম্মানিত পাঠক, ক্রেতা ও শুভান্যুধ্যায়ীদের প্রতি আমাদের আজকের এই একান্ত নিবেদন। সংবাদপত্র শিল্পে উদ্ভূত সর্বশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কিছু বক্তব্য উপস্থাপন জরুরি মনে করছি। সার্বিকভাবে এই শিল্পের সাথে জড়িত সবাইকে এবং বিশেষ করে নয়া দিগন্তে আমাদেরকে প্রতিদিন যে কঠিন চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই নিবেদন।
সংবাদপত্রের মূল কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে শতভাগের বেশি। গত বছর জুনে যে দাম ছিল প্রতি টন গড়ে ৪৩ হাজার টাকা, সেটিই এখন কিনতে হচ্ছে ৮৬ হাজার থেকে ৯৬ হাজার টাকায়। শিগগিরই তা লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা-ও কেউ জানে না। একই সাথে বিপুলভাবে বেড়েছে প্রিন্টিংয়ের ব্যয়ও। কালি, প্লেট ইত্যাদির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নিউজপ্রিন্টের চাহিদা বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়া এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়াই নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ার কারণ। সব মিলিয়ে সংবাদপত্রের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এ ব্যয় বহনে বেশির ভাগ পত্রিকাই হিমশিম খাচ্ছে।

এ দিকে সংবাদপত্রের আয়ের প্রধান উৎস বিজ্ঞাপন। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আবার একই কারণে জনগণ যে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে সে জন্যে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি একটি দৈনিক পত্রিকা কেনাও অনেকের কাছে বিলাসিতার বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে পত্রিকার দৈনিক বিক্রিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। সার্বিকভাবে সংবাদপত্র শিল্প এখন সর্বকালের কঠিনতম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

এরই মধ্যে নয়া দিগন্তসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় পত্রিকা তাদের প্রকাশনার কলেবর কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ২০ পৃষ্ঠার পত্রিকা ছাপা হতো, এখন তা ১২ থেকে ১৬ পৃষ্ঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে। শুধু কলেবরই কমেনি, অনেক পত্রিকার সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতনভাতা দেয়াও দুরূহ হয়ে পড়েছে। বেতনভাতা বকেয়া পড়ছে অনেক পত্রিকায়। কিছু পত্রিকা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে এমনকি বন্ধও হয়ে গেছে। বেকার হয়েছেন অনেক সাংবাদিক-কর্মচারী।

সংবাদপত্র শিল্পের আকাশে ঘনিয়ে ওঠা এই কালো মেঘ সহসা কেটে যাবে এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। সঙ্কট মোকাবেলায় চলতি মাসেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার আহ্বান জানানো হয় সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াব-এর পক্ষ থেকে। নোয়াব সংবাদপত্র শিল্পে আরোপিত ৩০ শতাংশ করপোরেট কর, নিউজপ্রিন্টের ওপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়করসহ প্রায় ২৭ শতাংশ কর তুলে দেয়া বা কমানোর দাবি জানায়। আবার সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) রয়েছে ৪ শতাংশ। চলতি বছরের বাজেট ঘোষণার আগেই এই দাবি জানানো হলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। অথচ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া রুগ্ণ এই শিল্পের টিকে থাকার আর কোনো উপায় আছে বলে মনে করেন না শিল্প-সংশ্লিষ্টরা।

আরেকটি ছোট উপায় আছে, যা নির্দিষ্ট পত্রিকার পক্ষ থেকে অবলম্বন করা যেতে পারে। সেটি হলো, বাড়তি উৎপাদন মূল্যের নিরিখে পত্রিকার দামের সমন্বয় করা। সোজা কথায় পত্রিকার দাম বাড়ানো। এটি পত্রিকার অস্তিত্ব ধরে রাখার ন্যূনতম নিশ্চয়তা দেবে বলে মনে করার কোনো অবকাশ নেই। এটা হলো ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো ধরে ভেসে থাকার মতোই একটি মরিয়া প্রয়াসমাত্র।

প্রিয় পাঠক ও ক্রেতাদের প্রতি আমাদের নিবেদন, বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতি সার্বিকভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরার পর আমরা বলতে চাই যে, আমরা নয়া দিগন্তের প্রতি কপির দাম সমন্বয় করতে যাচ্ছি। পত্রিকার কর্তৃপক্ষ, সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আমাদের শুভান্যুধ্যায়ীদের সাথে আলোচনা করে আমরা যৌক্তিকভাবে সবচেয়ে কম পরিমাণে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকে পত্রিকার দাম হবে প্রতি কপি ১০ টাকার পরিবর্তে ১২ টাকা। এই সিদ্ধান্ত ১৬ জুন ২০২২ থেকে কার্যকর হবে।

আমরা জানি, গোটা দেশবাসীর মতো আমাদের পাঠক ক্রেতারাও আর্থিক সঙ্কটে রয়েছেন। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিদ্যমান এই বিরূপ সময়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দুই টাকা দাম বাড়ানোর বিষয়টি তারা মেনে নেবেন এমন আস্থা আমাদের রয়েছে।




 আরও খবর