www.muktobak.com

এবছর ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেলেন যে চারজন


  মুক্তবাক ডেস্ক    ৩১ আগস্ট ২০২২, বুধবার, ১১:২৬    খবর



কম্বোডিয়ার খেমাররুজ শাসনামলের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া মনোবিদ সথেরা চিহিম এশিয়ার নোবেল হিসেবে খ্যাত র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে এবারের ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন ফিলিপাইনের শিশু অধিকারকর্মী ও চিকিৎসক বারমাদেত্তে জে মাদ্রিদ, জাপানের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ তাদাশি হাত্তোরি এবং ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশবিষয়ক আন্দোলনকারী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্যারি বেনচেগহিব।

আজ বুধবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা থেকে এবারের ৬৪তম ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিজয়ীদের নাম অনলাইনে ঘোষণা করেছে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন।

গত শতকের সত্তরের দশকে কম্বোডিয়ায় খেমাররুজ শাসনামলে চরম ক্ষুধা, দারিদ্র৵ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশটির প্রায় এক–চর্তুথাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় মদদে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। খেমার হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বেঁচে যান সথেরা চিহিম। ৫৪ বছর বয়সী এই মনোবিদ তাঁর জীবন খেমার হত্যাযজ্ঞে বেঁচে যাওয়া মানুষদের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। বিশেষত হত্যাযজ্ঞের ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া তিনি কম্বোডিয়ায় সংগঠিত গণহত্যার বিচারে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন সাক্ষী। মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করেছে ম্যাগসাইসাই কর্তৃপক্ষ।

ফিলিপাইনের শিশু অধিকারকর্মী ও চিকিৎসক বারমাদেত্তে জে মাদ্রিদের বয়স ৬৪ বছর। এই নারী ফিলিপাইনজুড়ে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব। বিশেষত পারিবারিক পর্যায়ে শিশুদের ওপর চালানো নির্যাতন বন্ধের নানা উদ্যোগের কারণে তাঁকে ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

জাপানের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ তাদাশি হাত্তোরি ভিয়েতনামের গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের চোখের চিকিৎসা করে সাড়া ফেলেছেন। সামর্থ্যহীন মানুষের চোখে অস্ত্রোপচার করা ৫৮ বছর বয়সী এই চিকিৎসকের ধ্যানজ্ঞান। এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এবারের মর্যাদাপূর্ণ ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন।

অন্যদিকে ফরাসি পরিবেশবিদ ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্যারি বেনচেগহিব ইন্দোনেশিয়ায় নদী রক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় মুখ। ২৭ বছর বয়সী এই তরুণ পরিবেশদূষণ থেকে ইন্দোনেশিয়ার নদীগুলোকে রক্ষা করা ও ইতিমধ্যে চরম দূষণের শিকার নদীগুলো প্লাস্টিক ও বর্জ্যমুক্ত করার কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন।

আগামী নভেম্বরে ম্যানিলায় এক অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে মর্যাদাপূর্ণ ম্যাগসাইসাই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র‍্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের নামে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। র‍্যামন ম্যাগসাইসাই ১৯৫৭ সালের ১৭ মার্চ মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। ১৯৫৮ সাল থেকে তাঁর নামে এ পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। প্রতিবছর ৩১ আগস্ট ম্যানিলা থেকে এ পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ৩১ আগস্ট র‌্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের জন্মদিন।

বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত ১২ জন মর্যাদাপূর্ণ ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছেন সমাজসেবী তহরুন্নেসা আবদুল্লাহ (১৯৭৮), ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ (১৯৮০), গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (১৯৮৪), গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (১৯৮৫), ক্যাথলিক ধর্মযাজক রিচার্ড উইলিয়াম টিম (১৯৮৭), দিদার কমপ্রিহেনসিভ ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইয়াসিন (১৯৮৮)।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ২০০৪ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান। এর ঠিক পরের বছর ২০০৫ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তাঁর পরে বেসরকারি সংগঠন সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান (২০১০), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (২০১২) ও বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী (২০২১) মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার পান।




 আরও খবর