
ছবি : এ আই
'ফেক নিউজ' সাধারণত দুই ধরনের তথ্যের সমন্বয়ে গঠিত: মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য, যা নির্বিশেষে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভুয়া তথ্য, যা জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করতে রাজনৈতিক, আর্থিক বা সামাজিক লাভের জন্য সজ্ঞানে তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশে ফেক নিউজ ছড়ানো একটি চলমান সমস্যা হলেও, ভারতের থেকে আসা সাম্প্রতিক ফেক নিউজের ঢেউ এটিকে জাতীয় উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত করেছে। বাংলাদেশি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের মতে, ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ১৩টি ফেক নিউজ ভারতীয় ৪৯টি মিডিয়া আউটলেটে ছড়ানো হয়েছে।
মিথ্যা তথ্য এবং মিডিয়া ব্যবহারের দায়িত্বশীলতা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলি, যেমন ১৯৩৬ সালের শান্তির জন্য সম্প্রচার ব্যবহারের কনভেনশন এবং ১৯৫৩ সালের আন্তর্জাতিক সংশোধনের অধিকার সম্পর্কিত কনভেনশন, এসব ক্ষেত্রে কার্যকারিতা এবং ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সংকটে পড়েছে। তাছাড়া, বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়ই এই চুক্তিগুলোর সদস্য নয়।
তবে, ফেক নিউজ ছড়ানোর জন্য রাষ্ট্রকে দায়ী করা চ্যালেঞ্জিং, কারণ অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলির গোপনীয়তা এবং রাষ্ট্রবহির্ভূত সম্পৃক্ততা। অন্য দেশের ফেক নিউজ প্রতিরোধে প্রথম পদক্ষেপ হল, দ্রুত একটি সরকারি প্রতিবাদ প্রকাশ করে তথ্য পরিষ্কার করা, জাতীয় মর্যাদা রক্ষা করা এবং ভুল বোঝাবুঝি প্রতিরোধ করা। এর একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ হল ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের বিষয়ে যে ভিত্তিহীন ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত ও অটুট প্রতিবাদ।
ফেক নিউজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো সংশ্লিষ্ট দেশের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা। একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ে বৈঠক। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ভারতের মিডিয়া থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ সম্পর্কে পরিবেশিত বিভ্রান্তিকর তথ্য সম্পর্কে তুলে ধরেন এবং ভারত সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেন।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা। এই পন্থার একটি উদাহরণ হল, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের মেটাকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছড়ানো মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা।
চতুর্থত, বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে YouTube প্ল্যাটফর্মে ইনফ্লুয়েন্সারদের এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের উপস্থিতি বাড়ানো উচিত। তাদের ভিডিওর বর্ণনায় আসল আর্টিকেল, গবেষণা বা ডেটা যোগ করা উচিত যাতে বিষয়বস্তুর স্বচ্ছতা বাড়ে।
এছাড়া, X (পূর্বে Twitter)-এ বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের সীমিত উপস্থিতি আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রভাব ফেলতে সক্ষম নয়। X-এ বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তা আন্তর্জাতিকভাবে সঠিক তথ্য শেয়ার করা যায়।
অন্য দেশগুলোর থেকে কিছু মূল্যবান দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাইওয়ান যা চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া থেকে প্রচুর ভুয়া তথ্যের সম্মুখীন হয়, তারা ফ্যাক্ট-চেকিং উদ্যোগ যেমন MyGoPen এবং Taiwan FactCheck Centre (TFC) চালু করেছে। বাংলাদেশ এই মডেল অনুসরণ করে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সঠিক তথ্য প্রচারের জন্য ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলির সাথে সহযোগিতা করতে পারে।
ফিনল্যান্ড, ২০১৬ সালে একটি শক্তিশালী মিডিয়া সাক্ষরতা পাঠ্যক্রম চালু করেছে, যা শিক্ষার্থীদের মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদান করে। বাংলাদেশও এটি অনুসরণ করতে পারে এবং সমস্ত স্তরের শিক্ষায় মিডিয়া সাক্ষরতা পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
সবশেষে, একটি ২৪ ঘণ্টার রিঅ্যাকশন দল গঠন করা জরুরি, যা দ্রুত তথ্য যাচাই করতে এবং ভুয়া খবরের বিপরীতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে প্রকাশিত Filtering out the truth from a sea of misinformation লেখার অনুবাদ - মুক্তবাক