
কার্টুন প্রকাশে অস্বীকৃতি জানানাের প্রতিবাদে ওয়াশিংটন পোস্টের পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত কার্টুনিস্ট অ্যান টেলনেস পদত্যাগ করেছেন। কার্টুনটিতে ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক জেফ বেজোসসহ অন্যান্য মিডিয়া নির্বাহীরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছেন এমন চিত্র দেখানো হয়েছিল। কার্টুনটির উদ্দেশ্য ছিল ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য টেক ও মিডিয়া বিলিয়নিয়ারদের প্রচেষ্টার সমালোচনা করা।
ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয় পৃষ্ঠার সম্পাদক ডেভিড শিপলি এই কার্টুনটি প্রত্যাখ্যান করার পেছনে যুক্তি দিয়েছেন। তার মতে, পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় একই বিষয়ে ইতিমধ্যে লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবং বিষয়বস্তুর পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে টেলনেস এবং তার সমর্থকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত একটি নিরপেক্ষ সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক চাপ এবং পক্ষপাতের প্রতিফলন।
টেলনেস এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, "এই ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে সীমিত করে না, এটি গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে বাধা দেয়।" তিনি আরও বলেন, তার কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতাবানদের জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা।
কার্টুনটি ছিল একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র, যেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে বেজোস এবং অন্যান্য মিডিয়া নির্বাহীদের একত্রিত হওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছিল। টেলনেস বিশ্বাস করেন, এই ধরনের কাজ গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য এবং এটি রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থাকা উচিত।
টেলনেসের পদত্যাগের খবরটি দ্রুত মিডিয়া এবং শিল্পমহলে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। আমেরিকান এডিটোরিয়াল কার্টুনিস্টদের অ্যাসোসিয়েশন ওয়াশিংটন পোস্টের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে। তারা একে "রাজনৈতিক কাপুরুষতা" বলে আখ্যা দেয় এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য এটি একটি বিপজ্জনক নজির বলে মন্তব্য করে।
টেলনেসের সমর্থনে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে প্রচার শুরু হয়। অনেকেই তার তৈরি কার্টুনটি শেয়ার করে ওয়াশিংটন পোস্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অ্যাসোসিয়েশনটি কার্টুনটি অনলাইনে শেয়ার করে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং এর অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে যখন বড় ব্যবসায়িক স্বার্থের সঙ্গে জড়িত হতে হয়, তখন তারা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে না। বিশেষত, যখন মালিকপক্ষ সরাসরি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের অংশীদার হয়।
অ্যান টেলনেসের পদত্যাগ শুধু একজন কার্টুনিস্টের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন এঁকেছে। টেলনেসের সমর্থকরা মনে করেন, তার এই সিদ্ধান্ত একটি প্রতিবাদের প্রতীক এবং এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন পোস্টের মতো একটি প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যে বার্তা দিয়েছে, তা তাদের নিরপেক্ষতার প্রশ্নে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে।