
জার্নালিজম গবেষণা প্রতিষ্ঠান Reuters Institute for the Study of Journalism -এর নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ভারতীয় সাংবাদিক মিতালি মুখার্জি। গত অক্টোবরে রাসমুস ক্লেইস নিলসেন পদত্যাগ করার পর থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। চলতি বছরের মার্চে একটি উন্মুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডেভিড ডয়েল এবং ইনস্টিটিউটের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ার অ্যালান রাসব্রিজার আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিয়োগ ঘোষণা করেন। ইনস্টিটিউটটির সদর দপ্তর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েই অবস্থিত। মিতালি মুখার্জি তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ইনস্টিটিউটের সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মিতালি। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি ফ্ল্যাগশিপ ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নতুন পৃষ্ঠপোষক সংযোজন করেছে এবং Oxford Climate Journalism Network-এর জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বজুড়ে শত শত সাংবাদিককে জলবায়ু সাংবাদিকতার মান ও প্রভাব উন্নয়নে সহায়তা করা হচ্ছে।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টেলিভিশন, প্রিন্ট এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সাংবাদিকতা করছেন মিতালি। তিনি শেভনিং ফেলো (২০২০), রাইসিনা ইয়ং ফেলো (২০১৯) এবং অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া ইয়ুথ ডায়ালগের ফেলো (২০১৭) হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২০ সালে তাঁর দুটি ব্যবসা-বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য ভারতের মর্যাদাপূর্ণ রেড ইঙ্ক অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পান।
তিনি The Wire ও Mint-এর পরামর্শক ব্যবসা সম্পাদক ছিলেন। এর আগে তিনি CNBC TV18-এর মার্কেটস এডিটর, TV Today ও Doordarshan-এর প্রাইমটাইম উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। Observer Research Foundation (ORF)-এ ফেলো হিসেবে লিঙ্গভিত্তিক নানা উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও আর্থিক সচেতনতা নিয়ে দুটি স্টার্টআপও সহ-প্রতিষ্ঠা করেছেন।
নিয়োগের প্রতিক্রিয়ায় মিতালি বলেন, “রয়টার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া আমার জন্য গর্বের বিষয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণা, আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন ঘটানো। বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার সময়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য।”
স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ার অ্যালান রাসব্রিজার বলেন, “দুই দফায় ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে তাঁর নেতৃত্ব প্রশংসনীয়। মিতালির নেতৃত্বে ইনস্টিটিউট একটি রূপান্তরের সময় পার করছে, আর এই রূপান্তরে তিনিই সঠিক ব্যক্তি।”
অধ্যাপক ডেভিড ডয়েল বলেন, “মিতালির কাছে ইনস্টিটিউটের জন্য এক দারুণ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। আমি নিশ্চিত, তাঁর নেতৃত্বে ইনস্টিটিউট আরও উচ্চতায় পৌঁছাবে।”
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্তোনিও জাপুল্লা বলেন, “স্বাধীন সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে ইনস্টিটিউট যে ভূমিকা রাখছে, তা এগিয়ে নিতে মিতালির নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।”
গ্রিন টেম্পলটন কলেজের প্রিন্সিপাল মাইকেল ডিক্সন জানান, “মিতালি এই কলেজের সাংবাদিক ফেলোদের মাঝে জনপ্রিয় একজন সদস্য এবং ইনস্টিটিউট ও কলেজের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।”
মিতালি মুখার্জি ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিচালক হিসেবে থাকা রাসমুস ক্লেইস নিলসেনের স্থলাভিষিক্ত হলেন। নিলসেনের সময়ে ইনস্টিটিউট বৈশ্বিক গবেষণা ও জলবায়ু পরিবর্তন, নেতৃত্বে বৈচিত্র্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নতুন কর্মসূচি চালু করে।
নিলসেন বলেন, “মিতালির মধ্যে সাংবাদিকতা, গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির দুর্দান্ত সংমিশ্রণ রয়েছে। তাঁর কৌতূহল, কৌশলী মনোভাব এবং কর্মক্ষমতা তাঁকে একজন অসাধারণ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।”