একটি ‘সভ্য’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কি ভালো সাংবাদিকতা উপহার দিতে পারে?

বিশ্ব

লরেন ওয়াটসন

(১ সপ্তাহ আগে) ১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫:৩১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:৩৭ অপরাহ্ন

talktrain

প্রথম দেখায় কানাডার নতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম "স্পেসেস" দেখে মনে হতে পারে যেন ফেসবুকের শুরুর দিনগুলোতে ফিরে গেছি—আকাশী নীল রঙের ডিজাইন, স্ক্রলিং নিউজ ফিড, আর অদ্ভুত ধরনের কমিউনিটি পেজ। কিন্তু এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ এলজি বলছেন, তিনি ফেসবুককে নকল করার চেষ্টা করছেন না; বরং তিনি চান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে স্থানীয় সাংবাদিকতার ঘাঁটি হিসেবে ফিরিয়ে আনতে।

স্থানীয় সংবাদ ও মার্কেটিং কোম্পানি ভিলেজ মিডিয়ার সিইও এলজি কাজ করছেন এক প্রতিকূল পরিবেশে—যেখানে কানাডায় স্থানীয় সাংবাদিকতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ২০২৩ সালে কানাডা সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বাধ্য করে সংবাদ কনটেন্ট থেকে প্রাপ্ত মুনাফার একটি অংশ সংবাদমাধ্যমকে দিতে। এর জবাবে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা কানাডায় সংবাদ দেখানোই বন্ধ করে দেয়, যার ফলে স্থানীয়ভাবে তথ্য আদান-প্রদানের একটি বড় মাধ্যম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এলজি, যিনি এই আইনটির বিরোধিতা করেছিলেন এমন পরিণতির আশঙ্কা থেকে, তখন দেখলেন একটি সুযোগ এসেছে। তিনি বলেন, “আমার লক্ষ্য হলো আমার কমিউনিটিসহ অন্যান্য জায়গায় ফেসবুকের দর্শকসংখ্যায় প্রকৃত প্রভাব ফেলা—স্পেসেসকে কমিউনিটি আলোচনার জন্য আরও ভালো জায়গা বানিয়ে।”

এলজির কল্পনায় এই নেটওয়ার্ক—যাকে তিনি একবার বলেছিলেন “ফেসবুক গ্রুপ, রেডিট ও নেক্সটডোরের সমন্বয়”—হচ্ছে সংবাদে পাঠক টানার একটি নতুন পথ। শুরুটা হচ্ছে ভিলেজ মিডিয়ার মালিকানাধীন দুই ডজনেরও বেশি স্থানীয় নিউজ সাইট থেকে। প্রতিষ্ঠানটি অন্টারিও প্রদেশজুড়ে ৩১টি ডিজিটাল নিউজ পোর্টাল পরিচালনা করছে, পাশাপাশি মিশিগানের একটি শহরেও একটি পোর্টাল চালায়। এসব সাইট নির্ভরযোগ্য ও জনপ্রিয়, এবং অনেক সময় এমন এলাকাকে সেবা দেয় যেখানে আর কোনো সংবাদমাধ্যমই নেই। স্পেসেস ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে, এবং কেবল সেখানে, যেখানে ভিলেজ মিডিয়ার উপস্থিতি ইতোমধ্যে আছে। এলজি বলেন, “যদি আমাদের এই সংবাদপত্রগুলো না থাকত, তাহলে আমরা কখনই এমন কিছু শুরু করতাম না। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো, কমিউনিটিতে দর্শকসম্পৃক্ততার এমন একটি বড় মাধ্যম তৈরি করা, যা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে সহায়তা করবে।”

স্পেসেস-এ প্রবেশ মানেই যেন একটি ডিজিটাল টাউন হল-এ ঢুকে পড়া—যেখানে প্রতিটি শহরের জন্য তৈরি করা হয়েছে স্বতন্ত্র নেটওয়ার্ক, যার ‘ওয়েলকাম সাইন’ বাস্তব অন্টারিও শহরের মতোই দেখতে। এখানে কোনো কেন্দ্রীয় হাব নেই। প্রতিটি অঞ্চল নিজস্ব আলোচনার জায়গা হিসেবে কাজ করে, যেখানে স্থানীয় চর্চা ও আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে গ্রুপ আছে, যেমন “বাগানপালন” বা “আজ রাতে খাবার কী?” সাইটের সাইডবারে স্থানীয় ভিলেজ মিডিয়া পোর্টালের সর্বশেষ খবরগুলো প্রদর্শিত হয়—যেমন “আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে বন্য দাবানল মৌসুম,” “ওয়াওয়া স্কুল শিক্ষার্থীদের চিত্রকর্ম অন্টারিও পার্লামেন্টে প্রদর্শিত,” বা “এক ব্যক্তি আবারও টিম হর্টনে মাদক সেবনের কারণে নিষিদ্ধ।”

স্পেসেস-এ ব্যবহারকারীর মিথস্ক্রিয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, বলছেন এর ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনার এরিক মোস। তার ভাষায়, এর লক্ষ্য হলো আলোচনা বন্ধুসুলভ ও নিরাপদ রাখা। আগ্রহভিত্তিক গ্রুপ কেবল ভিলেজ মিডিয়ার কর্মীরা বা নির্ধারিত স্বেচ্ছাসেবী হোস্টরাই তৈরি করতে পারে। (“আমরা ‘গর্তযুক্ত রাস্তা’ নিয়ে কোনো গ্রুপ করিনি, এর পেছনে কারণ আছে,” তিনি বলেন।) ২০২০ সালে কোম্পানির প্রধান পোর্টাল SooToday-তে কিছু প্রতিবেদনে এত বেশি বর্ণবাদী ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য এসেছিল যে তারা মন্তব্য অপশনই বন্ধ করে দেয়। স্পেসেস-এ পেজগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত, কিন্তু কেবল যাচাইকৃত স্থানীয় বাসিন্দারাই মন্তব্য করতে পারে। এখানে ব্যবহারকারীদের কোনো প্রোফাইল পেইজ নেই, এমনকি সরাসরি মেসেজিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। “এ নিয়ে অনেক ভাবনা-চিন্তা করেছি,” বলেন মোস। “কিন্তু এটা আসলে মানুষ নয়, বিষয়বস্তুকে ঘিরেই গড়ে তোলা হয়েছে।”

একটি বন্ধুসুলভ প্ল্যাটফর্ম কেবল ব্যবহারকারীদের জন্যই নয়, ব্র্যান্ডগুলোর জন্যও লাভজনক—এটি এলজি খোলাখুলিভাবেই মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ইন্ডাস্ট্রির বেশিরভাগই ভুল পথে চলে গেছে—স্থানীয় বিজ্ঞাপন পণ্য তৈরি করার ক্ষেত্রে তারা দিশেহারা। শুধু মূল সংবাদ কনটেন্টের পাশে ডিসপ্লে বিজ্ঞাপন বসিয়ে কিছু হবে না। বরং, একটি শক্তিশালী কমিউনিটি সংবাদ ও তথ্যভিত্তিক মডেল—যেখানে আবহাওয়া, পরিবহন, অনুষ্ঠান, বিজ্ঞাপন, ওবিচুয়ারি ইত্যাদির মতো সেবামূলক সাংবাদিকতা থাকে—এগুলোই আমাদের বড় সম্পদ।” সাইটের মাইক্রো-কমিউনিটি বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলো স্বাভাবিকভাবেই মাইক্রো-টার্গেটেড বিজ্ঞাপনের উপযোগী। যেমন, Sault Ste. Marie-এর সাইক্লিং গ্রুপের সদস্যরা স্থানীয় সাইকেল দোকানের বিজ্ঞাপন দেখতে পান, আবার বার্লিংটনের রিয়েল এস্টেট গ্রুপের সদস্যরা বাড়ি বদলের সার্ভিসের বিজ্ঞাপন পান।

গেল্ফ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড্যাক্স ড’অর্যাজিও, যিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে গবেষণা করেন এবং স্পেসেসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন, বলছেন—এই প্ল্যাটফর্মের ঘনিষ্ঠ কমিউনিটি ও স্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতার ওপর নির্ভরতা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। “বিজ্ঞাপনদাতারা সরাসরি সমালোচনার দায়মুক্তি কিনছেন না ঠিক,” তিনি বলেন, “কিন্তু এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়, যেখানে অনুসন্ধানী বা সমালোচনামূলক সাংবাদিকতা অনেক সময়ই ব্যবসায়িক স্বার্থের সঙ্গে খাপ খায় না।” ড’অর্যাজিও আরও বলেন, আলোচনাগুলোর কঠোর নিয়ন্ত্রণ—যদিও প্রশংসনীয় একটি লক্ষ্য নিয়ে করা হয়েছে, যেমন ‘সভ্য আলোচনার হারানো শিল্পকে ফিরিয়ে আনা’—তবু এটি চিন্তার মুক্ত প্রবাহে বড় বাধা হতে পারে। “এটা কি কেবল ‘হাই ফাইভ’ দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম? নাকি এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে মানুষ বাস্তব কমিউনিটি সমস্যাগুলো নিয়ে খোলাখুলি, গঠনমূলকভাবে বিতর্ক করতে পারে?”

এলজি তার মডারেশন নীতিমালাকে আত্মত্যাগের ফল হিসেবে বর্ণনা করতে বেশি পছন্দ করেন। একটি ইমেইলে তিনি লেখেন, “এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে আমরা যদি ‘উসকানিমূলক’ বিষয় ও আলোচনা এড়িয়ে চলি, তাহলে আমাদের গ্রোথ ধীরগতির হবে। আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। আমরা এমন একটি স্বাস্থ্যকর ও গঠনমূলক পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই, যা কমিউনিটির জন্য উপযোগী—সবার দৃষ্টি টানার মতো উসকানিমূলক কোনো প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চাই না।”

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক আলোচনা স্পেসেসে স্থান পাবে, “যতক্ষণ না তা স্পেসের নিয়ম-কানুন (বা সামাজিক রীতিনীতির) ভেতরে থাকে।”

বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রসঙ্গে এলজি স্বীকার করেন, মডারেটররা “স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ নিরুৎসাহিত করবেন”—যেমনটি তাঁরা ব্যক্তিগত আক্রমণের ক্ষেত্রেও করেন।

আর যদি কোনো সংবাদ কনটেন্টের কারণে কিছু বিজ্ঞাপনদাতা হারাতে হয়, সেটাও তার জন্য নতুন কিছু নয়। এলজি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা ছোট ছোট কমিউনিটিতে প্রায়ই ঘটে থাকে, কিন্তু আমাদের টিম তখন কাউকে না কাউকে খুঁজে বের করে ওই বিজ্ঞাপনদাতার জায়গা পূরণ করে দেয়, এবং আমাদের যাত্রা চলতে থাকে।”

কলম্বিয়া জার্নালিজম রিভিউতে প্রকাশিত ইংরেজি নিবন্ধটির অনুবাদ। - মুক্তবাক

বিশ্ব থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ