প্রথম আলোর জঙ্গিবাদ কাভারেজ ও আমার অভিজ্ঞতা (প্রথম পর্ব)

দেশ

আহমেদ জাঈফ

(২ মাস আগে) ১ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৩:৩৩ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:৪০ অপরাহ্ন

talktrain

জঙ্গিবাদ কাভারেজে বাংলাদেশে যে গনমাদ্ধ‍্যমটি সবচেয়ে বেশি যাচাই বাছাই করে তথ্য প্রকাশ করে থাকে সেটি প্রথম আলো। 
প্রায় সব টিভি- পত্রিকার সাংবাদিকেরা যখন র‍্যাব-পুলিশ যা বলতো তা ধরেই নিউজ করতেন তখন আমাদের কাজের মূলমন্ত্র ছিলো একেবারেই ভিন্ন। র‍্যাব- পুলিশের দেয়া তথ্যকে আমরা  প্রাথমিক তথ্য হিসাবে নিতাম। এরপরই শুরু হতো ক্রস চেক। জঙ্গিবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বা জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হওয়া  ব‍্যাক্তিদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতজনদের দেয়া তথ্যকেই আমরা প্রাধান্য দিয়েছি সব সময়। এ জন্য আমাদেরকে দিনের পর দিন চেষ্টা চালাতে হতো। কারণ জঙ্গিবাদের অভিযোগ থাকা ব‍্যাক্তিদের সম্পর্কে কথা বলতে চাইতেন না কেউ। সমাজে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ে কিংবা র‍্যাব-পুলিশের শাসানিতে বাবা-মা, ভাই বোন পর্যন্ত চুপ হয়ে যেতেন। তাঁদেরকে আস্থায় এনে কথা বলা ছিলো একটা বিরাট কাজ। 
জঙ্গিবাদের অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হতো তাঁদের অধিকাংশকেই র‍্যাব- পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসার পর নিজেদের হেফাজতে রেখে কিছুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করতো। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হতো। এজন্য জঙ্গিবাদের অভিযোগে কোনো ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়ার সাথে সাথেই তাঁদের বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলা ছিল আমাদের সর্বপ্রথম কাজ। বিষয়টা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে র‍্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা অনেক সময় মামলা হওয়ার পর অভিযুক্ত ব‍্যাক্তিকে কারাগারে পাঠানোর আগ পর্যন্ত বাড়ির ঠিকানা দিতে চাইতেন না। কারণ ঠিকানা পেয়ে আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলে তাঁদেরকে যে কিছুদিন আগেই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে সেই তথ্যটুকু আমরা নিউজে জুড়ে দিতাম। এই তথ্য অনেকেরই জামিন পেতে কাজে লাগত। র‍্যাব- পুলিশের কর্মকর্তারা এই তথ‍্য না লিখতে বহু অনুরোধ করতেন কিন্তু তাদের কথায় আমরা কান দিয়েছি এমন কিছু আমার মনে পড়ে না। 
ইলিয়াস হোসেন তাঁর ভিডিওতে দাবি করেছেন- "জঙ্গিরা মাঠে কার্যক্রম শুরু করার আগেই এই পত্রিকাটির অফিস তা জেনে যায়। আর তারা যা জানে সেটাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান হয় । আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেভাবেই কাজ করে ঠিক যেভাবে পত্রিকাটি চায়।” 
বরং বাস্তবতা ছিল একেবারেই উল্টো। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা প্রথম আলোতে কাজ করতাম বলে আমাদেরকে তথ্য দিতে চাইতেন না। কারণ তারা যেভাবে চাইতেন আমরা সেভাবে কখনই নিউজ করতাম না। শুধুমাত্র পুলিশের ভাষ্য দিয়েই বহু সাংবাদিক যেখানে দিনের পর দিন “বিশেষ প্রতিবেদন” লিখে গেছেন, “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা” করে গেছেন, এমনকি জঙ্গিবাদ বিষয়ক বইও লিখে ফেলেছেন সেখানে প্রতিদিনকার নিউজ পেতেই আমাদেরকে বহু কাঠখড় পোহাতে হতো। 
উদাহরণ হিসাবে একটা ঘটনা উল্লেখ করি। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার কিছুদিন পরই র‍্যাব সারা দেশ থেকে “নিখোঁজ” হওয়া ২৬২ জনের একটা তালিকা প্রকাশ করে। অধিকাংশ টিভি-পত্রিকা যখন ওই তালিকা ধরে ঢালাওভাবে নিউজ করা শুরু করে তখন আমরা সারা দেশের প্রতিনিধিদের কাজে লাগাই ঠিকানা ধরে ধরে খোঁজ নিতে। নিজেরা ঢাকার অলিগলিতে যেয়ে খোঁজা শুরু করি। আমরা খুঁজে পাই এই তালিকার কেউ প্রেমঘটিত বা পারিবারিক কারণে বা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন, পরে ফিরে এসেছেন। আমাদের উপর্যুপরি নিউজের কারণে কয়েকদিন পড় র‍্যাব ২৬২ জন্যের বদলে ৬৮ জনের তালিকা প্রকাশ করতে বাধ‍্য হয়। 
চলবে….!
বিদ্র: প্রথম আলোতে আমি অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকতা করেছি ২০১৬ সালের মার্চ  থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত। তাই ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে  হামলার ঘটনার দিন থেকে আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর “জঙ্গিবাদ বিরোধী” অভিযান এবং দেশে জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ে নিউজ করা শুরু করি। ২০২১ সালে চাকরি ছাড়ার আগ পর্যন্ত সেটা অব্যাহত ছিলো।

(লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে লেখাটি নেওয়া হয়েছে।- মুক্তবাক) 

দেশ থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ