
বাংলাদেশের স্বনামধন্য ২৪ ঘণ্টার সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টিফোর ছেড়েছেন জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক ফারাবী হাফিজ। এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে অনেকে জেনেছেন বিষয়টি। তবে কোথায় যোগ দিচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
এ ব্যাপারে ফারাবী হাফিজের সঙ্গে কথা বলেছে গণমাধ্যম বিষয়ক সাময়িকি মুক্তবাক। তিনি মুক্তবাককে জানিয়েছেন, একটি নতুন ২৪ ঘণ্টার সংবাদভিত্তিক টেলিভিশনে যোগ দিয়েছেন। নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার টিমে নেতৃত্বদানকারীদের একজন হিসাবে নিরলসভাবে কাজ করছেন তিনি।
ফারাবী হাফিজ মুক্তবাককে বলেন, এখনই নাম বলতে চাই না। তবে আকাশে চাঁদ উঠলে যেমন সবাই এমনি এমনি জেনে যায়, তেমনি নতুন প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হলে আলাদা করে বলতে হবে না কোথায় কাজ করছি। ভালো কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছি। একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের শুরুটা দীর্ঘমেয়াদি। ফলে গুছিয়ে নিতে সময় লাগছে। আমরা দিনরাত কাজ করছি। আমি আশাবাদী বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে নতুনমাত্রা যোগ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে চ্যানেল২৪-এ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় সংবাদ উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ফারাবি হাফিজ প্রায় ১৬ বছর যাবত সাংবাদিকতায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়েছেন। প্রথমে তিনি সরকারি চাকরিতে নন-ক্যাডারে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি চাকরির ধরাবাঁধা নিয়মে তিনি স্বস্তি পাননি। তাই দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে অবদান রাখার প্রত্যয় নিয়ে তিনি সরকারি চাকরিকে বিদায় জানিয়ে গণমাধ্যমে পা রাখেন। এই যাত্রায় প্রথমে দেশ টিভিতে ২০০৯ সালে ফুলটাইম রিপোর্টিংয়ে যোগ দেন। এরপর ২০০৯ সালে ক্যারিয়ারে ভিন্নতা আনেন। এটিএন নিউজে যোগ দেন সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে।
এরপর ২০১০ সালের শেষ দিকে সময় টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপনায় যুক্ত হন। দুই বছরেরও বেশি সময় সেখানে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। তারপর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল২৪-এ টানা এক যুগেরও বেশি সময় কাটিয়ে দেন। এবার দেখছেন নতুন স্বপ্ন। ২০২৫ সালে নিজের ক্যারিয়ারের ভিন্নমাত্রার পালক যুক্ত করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন কোনো স্যাটেলাইট টিভির হাতেখড়ি হচ্ছে তার মাধ্যমে।
ফারাবি হাফিজ ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে অর্জন করেছেন একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তার কণ্ঠের জাদুতে মোহাবিষ্ট করেছেন দেশ-বিদেশের কোটি কোটি দর্শক-শ্রোতাকে। বলা যায়, দেশীয় সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ উপস্থাপনায় জনপ্রিয়তার শীর্ষদের একজন তিনি।
সংবাদ উপস্থাপনায় কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের রিপোর্টিং পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রজেক্টেও সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। ফারাবি জানান, পুরস্কার হিসেবে মানুষের ভালোবাসা অর্জনই তার কাছে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান।
এই সফল ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘পরিশ্রম করলে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া যায়, কিন্তু মানুষের ভালোবাসা ক’জন অর্জন করতে পারে! তাই আমি সবসময় মানুষকে সেবার মধ্যদিয়ে তাদের ভালোবাসা খুঁজি। নিজেকে সবসময় অপরিহার্য করে তৈরি করতে হয়, তাহলে আর ক্যারিয়ারের চিন্তা করতে হয় না।’
ফারাবি হাফিজ স্কুল-কলেজ জীবন পার করেছেন তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। এখানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিকতায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পছন্দের ক্যারিয়ারে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তৈরি করতে সম্পন্ন করেছেন অসংখ্য ছোট-বড় কোর্স। ক্যারিয়ার জীবনে যেসব তাকে এনে দিয়েছে একঝুড়ি সাফল্য। শিক্ষাজীবনে অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য পেয়েছেন তিনি। যারা তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এক স্বর্ণখোচিত ব্যক্তিত্বের।
প্রসঙ্গত, ফারাবি হাফিজ ১৯৮৯ সালের ২ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন। বাবা শেখ মুজিবুর রহমান এবং মা শেখ সালেহা বেগম। পাঁচ ভাই-বোনের মাঝে তিনি চতুর্থ। তার চার বোন। একমাত্র ভাই হওয়ায় আদর পেয়েছেন পরিবারের সবার।