শেখ হাসিনা পালানোর ব্রেকিং নিউজ যেভাবে দেওয়া হয়

বইপত্র

আশীফ এন্তাজ রবি

(১ মাস আগে) ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩:৫৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

talktrain

আশীফ এন্তাজ রবি ও এএফপির তৎকালীন ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম

দুপুর ২টা।
এএফপির সাংবাদিক শফিকের কাছে একটি ফোনকল এসেছে। ফোন করেছেন একজন বিখ্যাত লোক। তাকে টিভির টকশোতে প্রায়ই দেখা যায়।
একসময় সাংবাদিক ও সম্পাদক ছিলেন। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কাজ করেন। ঘনিষ্ঠভাবে।
: শুনছো নাকি শফিক। ঘটনা তো ঘটে গেছে।
: কী হইছে ভাই?
: আপা তো পলাইছে। হেলিকপ্টারে করে। দেশ ছেড়ে ভাগছে।
: বলেন কী!
: ঘটনা সত্য। এতক্ষণে তিনি আকাশে।
: আমি কি এই খবরটা পাবলিশ করতে পারি?
: তোমার ইচ্ছা। তবে আমার নাম দিও না। খবরদার না।
ফোনটা কেটে দিয়ে শফিক ফোন দিলেন সিঙ্গাপুরে। এএফপির এশিয়া বিভাগের প্রধানকে জানানো হলো। এশিয়া বিভাগের প্রধান বললেন, এই খবরের সোর্স কী?
শফিক সোর্সের নাম ও পদবি বললেন। এবং শর্ত দিলেন, কোনোভাবেই যেন সোর্সের নাম ও পদবি প্রকাশ না পায়।
খবরটি শোনার পর থেকে শফিকের সারা শরীর কাঁপছে। তিনি আবার ফোন করলেন তার সোর্সকে। 
: ভাই। এই খবর দিয়া আমি বিপদে পড়মু না তো?
: আরে না। খবর কনফার্ম।
: ভাই, আপনি কি আমারে একটা লিখিত টেক্সট দিবেন। সেফটির জন্য।
খবরটি পাবলিশ হলো। এক লাইনের খবর। গণ-অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী দেশ ত্যাগ করেছেন । 
আগুন গতিতে সংবাদটা ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। এমনকি বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো এএফপির বরাত দিয়ে খবরটি স্ক্রল আকারে দেখাতে
লাগল। বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ রাস্তায় নেমে এলো। 
গণভবনমুখী জনতার স্রোত হয়ে গেল জনতার ঢল। 
আর এদিকে সাংবাদিক শফিক উত্তেজনায় কাঁপতে লাগলেন।
তার সোর্স যদি ভুল খবর দেয়। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে মিসলিড করে। তাহলে ক্যারিয়ার তো শেষ। এএফপিও শেষ। আর কী কী শেষ শফিক এটা ভাবার চেষ্টা করলেন।
শফিকের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। হায় রে সাংবাদিকতা। সে নিজে মরলে মরবে, কিন্তু তার সহকর্মীরা অনেকেই বয়সে তরুণ। এ সময়
শফিকের মনে পড়ে গেল তার পরিবারের কথা। তার চোখ বেয়ে পানি ঝরতে লাগল।
জুলাই মাস। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে লু হাওয়া। এরই মধ্যে শফিকের গোটা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। হঠাৎ করে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। সাথে বুকের ভেতর চাপ-চাপ ব্যথা।
ঠিক আধা ঘণ্টা পর একটা খবর এলো। খবরটি শুনে শফিকের বুকের কাঁপুনি কমল।
খবরটা হচ্ছে, সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। টিভিতে এখন এই খবরও স্ক্রল হচ্ছে।
শফিক একটা বড়ো দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সেনাপ্রধান ভাষণ দেবেন ইঙ্গিতটা খুবই স্পষ্ট। তিনি সত্যি পালিয়েছেন। খবর ঠিক।
দুপুর ৩টা। ৫ আগস্ট, ২০২৪। এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম কাঁদতে শুরু করলেন। 
এই সাহসী সাংবাদিকের কান্না ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকুক।

নোক্তা : জুলাই আন্দোলনের অজানা অনেক শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা নিয়ে আশীফ এন্তাজ রবির সাড়া জাগানো নতুন উপন‍্যাস "ট্রেন টু ঢাকা" হতে। বইটির প্রকাশক জ্ঞানকোষ প্রকাশনী।